একাত্তর টেলিভিশনের সাবেক বার্তাপ্রধান শাকিল আহমেদ ও সাবেক প্রধান প্রতিবেদক-উপস্থাপক ফারজানা রূপাকে হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। বুধবার (২১ আগস্ট) এই দুজনকে ঢাকার হযরত শাহজালাল (রহ.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে আটক করা হয়।
পরে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) এক খুদে বার্তায় বলা হয়, শাকিল আহমেদ ও ফারজানা রূপাকে উত্তরা পূর্ব থানার মামলায় বিকালে হযরত শাহজালাল (রহ.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তারা বিদেশে যাওয়ার উদ্দেশ্যে বিমানবন্দরে এলে ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ তাদেরকে আটক করে গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) কাছে হস্তান্তর করে।
পুলিশের দেওয়া তথ্যমতে, শাকিল ও ফারজানাকে যে মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে, সেটি ২১ আগস্ট দায়ের করা হয়। উত্তরা পূর্ব থানার এ মামলাটি দণ্ডবিধির ৩০২ (হত্যার অভিযোগ) এবং ১১৪ ও ১০৯ ধারায় দায়ের করা হয়েছে।
শাকিল আহমেদ ও ফারজানা রুপা স্বামী-স্ত্রী। বিমানবন্দর সূত্রে জানা যায়, বুধবার সকালে টার্কিশ এয়ারলাইনসের একটি উড়োজাহাজে ইস্তাম্বুল হয়ে ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে যাওয়ার উদ্দেশ্যে বিমানবন্দরে গিয়েছিলেন শাকিল ও ফারজানা। এ সময় সঙ্গে তাদের মেয়ে ছিল। তারা একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা ও ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষের অনুমতিও পান। তাদের ফ্লাইট ছিল ৬টা ২০ মিনিটে।
একপর্যায়ে ডিবির একটি দল বিমানবন্দর গিয়ে জানায়, শাকিল ও ফারজানা দম্পতির বিরুদ্ধে রাজধানীর একটি থানায় মামলা আছে। এ মামলায় তাদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পরে শাকিল-ফারজানা দম্পতিকে নিয়ে যান ডিবির সদস্যরা।
শাকিল আহমেদ ও ফারজানা রূপা কয়েক বছর ধরে একাত্তর টেলিভিশনে কাজ করছিলেন। ৮ আগস্ট তাদের ওই দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেয় একাত্তর টেলিভিশন কর্তৃপক্ষ। সেদিন বেসরকারি এই টেলিভিশন স্টেশনের এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, একাত্তর মিডিয়া লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত ও নির্দেশনা অনুযায়ী সেদিন (৮ আগস্ট) থেকেই শাকিল (হেড অব নিউজ) ও ফারজানাকে (প্রিন্সিপাল করেসপনডেন্ট ও প্রেজেন্টার) চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হলো।
গত ১৪ জুলাই চীন সফর শেষে গণভবনে সংবাদ সম্মেলন করেছিলেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সংবাদ সম্মেলনে শেখ হাসিনাকে প্রশ্ন করেছিলেন ফারজানা রূপা। তার প্রশ্নটি ছিল, কোটা আন্দোলনে মুক্তিযোদ্ধাদের উদ্দেশ্য করে প্রতিনিয়ত অবমাননাকর বক্তব্য রাখা হচ্ছে। এই অবমাননা মুক্তিযোদ্ধারা সহ্য করতে পারছেন না। রাষ্ট্রের কিছু করণীয় আছে কিনা?
এমন প্রশ্নের পর ফারজানা রূপার ব্যাপক সমালোচনা করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে যুক্ত শিক্ষার্থীরা।
প্রবল গণআন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনার পতনের পর গত ১০ আগস্ট জাতীয় প্রেস ক্লাবের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদককে একটি চিঠি পাঠান বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক আব্দুল কাদের ও আবদুল হান্নান মাসুদ।
তাতে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সদস্য ৫০ জন সাংবাদিকের একটি তালিকা দিয়ে বলা হয়, এসব সাংবাদিক প্রতিনিয়ত পুলিশ ও আওয়ামী লীগকে মদদ এবং উসকানি দিয়েছেন। এভাবে তারা ছাত্রদের বিরুদ্ধে ‘মানবতাবিরোধী’ অপরাধে জড়িত ছিলেন।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষে এসব সাংবাদিককে সাংবাদিকতা অঙ্গনে নিষিদ্ধ করার দাবি তোলেন আব্দুল কাদের ও আবদুল হান্নান। ওই তালিকার ৫০ সাংবাদিকের মধ্যে শাকিল ও রূপার নাম আছে।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (এডিসি) ওবায়দুর রহমান বলেন, ফ্রান্সের প্যারিসে যাওয়ার উদ্দেশ্যে হযরত শাহজালাল (রহ.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে গেলে শাকিল আহমেদ ও ফারজানা রূপাকে আটক করা হয়। তাদের উত্তরা পূর্ব থানার একটি মামলায় বিকালে গ্রেপ্তার দেখানো হয়।
পিপলনিউজ/আরইউ
প্রকাশক ও সম্পাদক
জাহিদুল ইসলাম
বার্তা সম্পাদক
সোহেলী চৌধুরী লিন্ডা
© 2024 সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত || peoplenewsbd.com