ছাত্র-জনতার বিক্ষোভের মুখে পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার পর ভারতে বসে দেশ সম্পর্কে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাম্প্রতিক রাজনৈতিক বক্তব্য-বিবৃতিকে অবন্ধুসুলভ আচরণ বলে বর্ণনা করেছেন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
বাংলাদেশে প্রত্যর্পণ না করা পর্যন্ত শেখ হাসিনাকে ভারতে চুপ থাকতে হবে বলেও জানান তিনি। ভারতীয় বার্তাসংস্থা পিটিআইকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ড. ইউনূস এই মন্তব্য করেন। বৃহস্পতিবার (৫ সেপ্টেম্বর) সাক্ষাৎকারটি প্রকাশ করেছে পিটিআই।
বুধবার (৪ সেপ্টেম্বর) পিটিআইকে দেওয়া এই সাক্ষাৎকারে ইউনূস ইঙ্গিত দিয়েছেন, শেখ হাসিনাকে ফেরত পাঠানোর বিষয়ে বাংলাদেশ অনুরোধ না করা পর্যন্ত ভারত যদি তাকে নিজের দেশে রাখতে চায়, তাহলে তাকে (হাসিনাকে) আরো মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকতে হবে। সাক্ষাৎকারে শেখ হাসিনা ছাড়া সবাইকে ইসলামপন্থি হিসেবে তুলে ধরার জন্য তিনি ভারতের সমালোচনাও করেন।
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ঢাকায় নিজের সরকারি বাসভবনে পিটিআই-কে দেওয়া ওই সাক্ষাৎকারে জোর দিয়ে বলেন, ভারতের সঙ্গে শক্তিশালী সম্পর্ককে বাংলাদেশ সম্মান করে এবং এই কারণে নয়াদিল্লিকে অবশ্যই এমন ধারণার বাইরে যেতে হবে যেটিতে আওয়ামী লীগ ছাড়া অন্য সব রাজনৈতিক দলকে ইসলামপন্থি হিসেবে চিত্রিত করে এবং শেখ হাসিনা ছাড়া দেশ আফগানিস্তানে পরিণত হবে বলে মনে করা হয়।
ড. ইউনূস বলেন, শেখ হাসিনা ভারতে অবস্থান করায় কেউই স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে না। কারণ বিচার করার জন্য আমরা তাকে ফেরত আনতে চাই। তিনি ভারতে রয়েছেন এবং সেখান থেকেই মাঝে মাঝে কথা বলছেন। এটি সমস্যা তৈরি করছে। যদি তিনি চুপ থাকতেন, তাহলে আমরা ভুলে যেতাম। মানুষও এটি ভুলে যেত, যদি তিনি নিজের জগতেই থাকতেন। কিন্তু তিনি ভারতে বসে কথা বলছেন এবং দিক-নির্দেশনা দিচ্ছেন, কেউই এটি পছন্দ করছে না।
নোবেলজয়ী এই অর্থনীতিবিদ বলেন, আমরা বেশ দৃঢ়ভাবে বলেছি যে– শেখ হাসিনার চুপ থাকা উচিত। এটি আমাদের প্রতি অবন্ধুসুলভ আচরণ; তাকে সেখানে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে এবং সেখান থেকে তিনি প্রচারণা চালাচ্ছেন। তিনি যে স্বাভাবিক নিয়মেই সেখানে (ভারতে) গেছেন তা নয়। জনগণের অভ্যুত্থান এবং জনরোষের কারণে তিনি পালিয়ে গেছেন।
ইউনূস বলেন, শেখ হাসিনা সরকারের আমলে হওয়া নৃশংসতার বিরুদ্ধে বাংলাদেশের জনগণের জন্য ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে অন্তর্বর্তী সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং ন্যায়বিচারের জন্যই তাকে দেশে ফিরিয়ে আনা প্রয়োজন।
তিনি জোর দিয়ে বলেন, হ্যাঁ, তাকে ফিরিয়ে আনতে হবে, তা না হলে বাংলাদেশের মানুষ শান্তিতে থাকবে না। শেখ হাসিনা যে ধরনের নৃশংসতা করেছেন, তাকে এখানে সবার সামনে বিচার করতে হবে।
বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের ভবিষ্যৎ নিয়ে কথা বলার সময় ড. ইউনূস ভারতের সঙ্গে সুসম্পর্কের আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ করেছেন। তবে তিনি জোর দিয়ে বলেন, নয়াদিল্লিকে এই মনোভাব ত্যাগ করতে হবে যে, শুধুমাত্র শেখ হাসিনার নেতৃত্বই বাংলাদেশের স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করে।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ভারতকে নিজেদের আখ্যান থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। আখ্যানটি হলো–(বাংলাদেশে) সবাই ইসলামপন্থি, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) ইসলামপন্থি, বাকি সবাই ইসলামপন্থি এবং এই দেশকে তারা আফগানিস্তানে পরিণত করবে। আর শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ নিরাপদ থাকবে। এই আখ্যানে ভারত বিমোহিত। ভারতকে এই আখ্যান থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশও তাদের আরেকটি প্রতিবেশি।
বাংলাদেশে হিন্দু সংখ্যালঘুদের ওপর তথাকথিত হামলার সাম্প্রতিক ঘটনা এবং এ নিয়ে ভারতেরউদ্বেগ প্রকাশের কথা উল্লেখ করে ড. ইউনূস বলেন, এটি একটা অজুহাত মাত্র। তিনি বলেন, সংখ্যালঘুদের অবস্থাকে এত বড় আকারে চিত্রিত করার চেষ্টার বিষয়টি একটি অজুহাত মাত্র।
শান্তিতে নোবেল বিজয়ী ৮৪ বছর বয়সী এই অর্থনীতিবিদ ভারত ও বাংলাদেশের বর্তমান উত্তেজনাপূর্ণ সম্পর্কের উন্নতির জন্য উভয় দেশের একসঙ্গে কাজ করার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়েছেন।
পিপলনিউজ/আরইউ
প্রকাশক ও সম্পাদক
জাহিদুল ইসলাম
বার্তা সম্পাদক
সোহেলী চৌধুরী লিন্ডা
© 2024 সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত || peoplenewsbd.com