লাগামহীন নিত্যপণ্যের বাজারে পুরোপুরি স্বস্তি ফিরেনি। রাজধানীতে সপ্তাহ ব্যবধানে বেড়ে গেছে মাছ, মাংস ও শাক-সবজিসহ বিভিন্ন পণ্যের দাম।
সাপ্তাহিক ছুটির দিনে শুক্রবার (১৩ সেপ্টেম্বর) সকালে বেশকিছু বাজার ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।
ব্যবসায়ীরা জানান, সম্প্রতি বৃষ্টি ও বন্যার কারণে ফসল, মাছ ও মুরগির খামার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে বাজারে কমে গেছে পণ্যের সরবরাহ। ফলে দাম কিছুটা ঊর্ধ্বমুখী।
তাদের মতে, বন্যার কারণে অনেক মুরগির খামার নষ্ট হয়েছে। এতে ওই সব এলাকায় মুরগি ও ডিমের সরবরাহ কমেছে। আবার ভারত থেকে সম্প্রতি যে ডিম আমদানি হয়েছে, তা চাহিদার তুলনায় সামান্য। ফলে সরবরাহ বৃদ্ধি না পাওয়ায় দাম কমছে না।
বিক্রেতারা বলছেন, সরবরাহ কমায় সবজির দাম বেড়েছে। মূলত বন্যার প্রভাব পড়েছে সবজির বাজারে।
মাছের দাম বাড়ার কারণ হিসেবে ব্যবসায়ীরা বলছেন, বন্যায় বেশকিছু অঞ্চলে চাষিদের মাছ ভেসে গেছে। ফলে বাজারে চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম থাকায় মাছের দাম কিছুটা বাড়তি।
কারওয়ান বাজারের ব্যবসায়ীরা বলছেন, বন্যার কারণে পাইকারি বাজারে বস্তাপ্রতি চালের দাম বেড়েছিল। যা এখনো কমেনি বলে আড়তদারা আমাদেরকে জানিয়েছেন। এজন্য খুচরা গ্রাহকদের কাছেও সেই বাড়তি দামে চাল বিক্রি করতে হচ্ছে আমাদের।
নিত্যপণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণে নিয়মিত বাজার মনিটরিংয়ের দাবি ক্রেতা ও বিক্রেতা উভয়েরই। ক্রেতারা বলছেন, নিয়মিত বাজার মনিটরিং করা হয় না। এতে বিক্রেতারা ইচ্ছেমতো দাম বাড়ানোর সুযোগ পান। আর বিক্রেতারা বলছেন, কিছু অসাধু ব্যবসায়ী ইচ্ছেমতো দাম বাড়াচ্ছে। বাজারে নিয়মিত অভিযান চালালে অসাধুদের দৌরাত্ম্য কমবে।
বাজারে মানভেদে প্রতি কেজি গোল বেগুন ৯০-১০০ টাকা, লম্বা বেগুন ৮০ টাকা, করলা ৭০-৮০, ঢ্যাঁড়শ ৫০, বরবটি ৬০, মুলা ৫০, লতি ৬০-৮০, কহি ৬০ টাকা ও পটোল ৫০-৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া প্রতি কেজি পেঁপে ৩০ টাকা, কচুরমুখী ৬০, টমেটো ১৬০, শিম ২০০ ও শসা বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকায়।
আর প্রতি কেজি আলু বিক্রি হচ্ছে ৫৫-৬০ টাকায়; প্রতি পিস লাউয়ের জন্য গুনতে হচ্ছে ৬০-৭০ টাকা। এ ছাড়া বাজারে লালশাকের আঁটি ২০ টাকা, পাটশাক ১৫, পুঁইশাক ৩০, লাউশাক ৪০, মুলাশাক ২০, ডাটাশাক ২০, কলমিশাক ১০-১৫ টাকা ও পালংশাক ২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
বাজারে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি ১৭০-১৮০ টাকা, সোনালি মুরগি বিক্রি হচ্ছে ২৪০-২৫০ টাকা, সাদা লেয়ার ২৪০ টাকা ও লাল লেয়ার বিক্রি হচ্ছে ২৮০ টাকায়। এ ছাড়া জাতভেদে প্রতি পিস হাঁস বিক্রি হচ্ছে ৫৫০-৬০০ টাকায়।
প্রতি কেজি গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৭৫০-৮০০ টাকায়। এ ছাড়া প্রতি কেজি খাসির মাংস এক হাজার ৫০ টাকা থেকে এক হাজার ১০০ টাকা এবং ছাগলের মাংস বিক্রি হচ্ছে এক হাজার টাকায়।
বাজারে মুরগির প্রতি ডজন লাল ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৫৫-১৬০ টাকা, আর সাদা ডিম ১৫০ টাকায়। আর প্রতি ডজন হাঁসের ডিম ২৩০ টাকা ও দেশি মুরগির ডিম ২৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
পাইকারি পর্যায়ে প্রতিকেজি কাঁচা মরিচ বিক্রি হচ্ছে ১৩০ টাকায়, খুচরা পর্যায়ে যার জন্য গুনতে হচ্ছে ১৬০ টাকা। এদিকে বাজারে বেড়ে গেছে প্রায় সব ধরনের মাছের দাম। প্রতি কেজি রুই বিক্রি হচ্ছে ৩৬০-৩৮০ টাকায়। এ ছাড়া চাষের পাঙাশ ২০০-২২০ টাকায়, তেলাপিয়া ২২০-২৫০ টাকা, চাষের কৈ ২৪০-২৮০ টাকায়, চাষের শিং প্রতি কেজি ৫৫০-৬০০ টাকায়, কোরাল ৭০০ টাকা, টেংরা ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা, বোয়াল ৭০০ টাকা, আইড় ৭৫০-৮০০ টাকা, পাবদা প্রতি কেজি ৫০০-৫৫০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে।
আর ভরা মৌসুম ইলিশের দাম আকাশ ছুঁই ছুঁই। দেড় কেজি ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে দুই হাজার ২০০ থেকে দুই হাজার ৩০০ টাকায়। এক কেজি ওজনের ইলিশ এক হাজার ৭০০ থেকে এক হাজার ৮০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর ৮০০-৯০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ এক হাজার ৫০০ থেকে এক হাজার ৬০০ টাকা ও ৫০০-৬০০ গ্রাম ওজনের ইলিশের জন্য গুনতে হচ্ছে এক হাজার ২০০ থেকে এক হাজার ৩০০ টাকা পর্যন্ত।
মগবাজারে মাহমুদুল হাসান নামে এক ক্রেতা বলেন, বাজারে সবকিছুর দাম বাড়তি কিন্তু আমাদের আয় তো বাড়েনি। দুটি টিউশনি করিয়ে আগে যা পেতাম, এখনো তাই পাই। কিন্তু যেভাবে সবকিছুর দাম বাড়ছে, তাতে আমাদের মতো মানুষদের কিছুই কিনে খাওয়ার উপায় নেই।
কাপ্তান বাজার থেকে পাইকারি মুরগি ক্রেতা আজমল হোসেন বলেন, পাইকারি ব্যবসায়ীরা বলছে সাপ্লাই কম।
পিপলনিউজ/আরইউ
প্রকাশক ও সম্পাদক
জাহিদুল ইসলাম
বার্তা সম্পাদক
সোহেলী চৌধুরী লিন্ডা
© 2024 সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত || peoplenewsbd.com