ঢাকা, বাংলাদেশ ২৬ নভেম্বর, ২০২৪

এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফল: জিপিএ-৫ বাড়লেও কমেছে পাসের হার

Publish : 02:39 AM, 18 October 2024.
এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফল: জিপিএ-৫ বাড়লেও কমেছে পাসের হার
সংগৃহীত
নিজস্ব প্রতিবেদক :

এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করা হয়েছে। সব বোর্ডের ফলাফল একসঙ্গে প্রকাশ করা হয়েছে। নিজ নিজ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও অনলাইনে একযোগে এই ফলাফল প্রকাশ করা হয়। এবার নয়টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ড, মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষা বোর্ড মিলিয়ে পাসের হার ৭৭ দশমিক ৭৮ শতাংশ। আর নয়টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডে পাসের হার ৭৫ দশমিক ৫৬ শতাংশ। ২০২৩ সালে গড় পাসের হার ৭৮ দশমিক ৬৪ শতাংশ। সে হিসাবে পাসের হার কমেছে দশমিক ৮৬ শতাংশ। মোট জিপিএ-৫ পেয়েছেন এক লাখ ৪৫ হাজার ৯১১ জন। ২০২৩ সালে জিপিএ-৫ পেয়েছিলেন ৯২ হাজার ৩৬৫ জন শিক্ষার্থী।

মঙ্গলবার (১৫ অক্টোবর) বেলা ১১টায় নিজ নিজ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও অনলাইনে একযোগে এ ফলাফল প্রকাশ করা হয়। আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটির সভাপতি ও ঢাকা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক তপন কুমার সরকার ফলাফলের সারসংক্ষেপ সাংবাদিকদের সামনে তুলে ধরেন।

তিনি জানান, এবার এইচএসসি পরীক্ষায় পাসের হার ৭৫ দশমিক ৫৬ শতাংশ। জিপিএ-৫ পেয়েছে এক লাখ ৩১ হাজার ৩৭৬ শিক্ষার্থী। আলিম পরীক্ষায় পাসের হার ৯৩ দশমিক ৪০ শতাংশ। জিপিএ-৫ পেয়েছে নয় হাজার ৬১৩ পরীক্ষার্থী। ভোকেশনাল/বিএম/ডিপ্লোমা ইন কমার্সে পাসের হার ৮৮ দশমিক ০৯ শতাংশ। জিপিএ-৫ পেয়েছে চার হাজার ৯২২ শিক্ষার্থী।

এবার ভিন্ন আঙ্গিকে ফল প্রকাশ করা হয়েছে। যেখানে থাকেনি কোনো আনুষ্ঠানিকতা। সরকারপ্রধান বা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপদেষ্টাও ফলাফল প্রকাশের কোনো অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন না। সব প্রথা বা রীতি ভেঙে স্ব স্ব বোর্ড চেয়ারম্যানরা ফল ঘোষণা করেন।

এবারের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় কিছু বিষয়ের পরীক্ষা নেওয়া হলেও, বেশ কিছু পরীক্ষা বাতিল করা হয়েছে। বাতিল হওয়া পরীক্ষাগুলোর নম্বর এসএসসির ফলাফলের ভিত্তিতে নির্ধারণ করা হয়েছে। এবার সাতটি বিষয়ে নম্বরের ভিত্তিতে মূল্যায়ন করা হলেও ১৩টি বিষয়ে সাবজেক্ট ম্যাপিংয়ের মাধ্যমে ফলাফল তৈরি করা হয়েছে। 

জিপিএ-৫ বাড়লেও কমেছে পাসের হার

প্রকাশিত ফলাফলে দেখা গেছে, পাসের হার গত বছরের তুলনায় কমেছে। গত বছর অর্থাৎ ২০২৩ সালে ১১টি শিক্ষা বোর্ডে যেখানে গড় পাসের হার ছিল ৭৮ দশমিক ৬৪ শতাংশ তা এবার কমে ৭৭ দশমিক ৭৮ শতাংশে নেমেছে। অর্থাৎ গত বছরের চেয়ে এবার পাসের হার কমেছে শূন্য দশমিক ৮৬ শতাংশ।

জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা অবশ্য এবার ব্যাপক হারে বেড়েছে। গত বছর এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়েছিলেন ৯২ হাজার ৩৬৫ জন শিক্ষার্থী। এবার ১১টি বোর্ডে সারাদেশে জিপিএ-৫ পেয়েছেন এক লাখ ৪৫ হাজার ৯১১ জন। সেই হিসাবে এবার জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেড়েছে ৫৩ হাজার ৫৪৬ জন।

কোন শিক্ষা বোর্ডে কত পাস

সাধারণ শিক্ষা বোর্ডগুলোর মধ্যে ফলাফলে এবার চমক দেখিয়েছে সিলেট মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ড। এ বোর্ডে এ বছর পাসের হার ৮৫ দশমিক ৩৯ শতাংশ; যা সাধারণ নয়টি শিক্ষা বোর্ডের মধ্যে সর্বোচ্চ। অন্যদিকে পাসের হারে তলানিতে রয়েছে ময়মনসিংহ শিক্ষা বোর্ড। বোর্ডটিতে পাসের হার ৬৩ দশমিক ২২ শতাংশ। শীর্ষে থাকা সিলেট বোর্ডের পরেই রয়েছে বরিশাল বোর্ড। বরিশালে পাসের হার ৮১ দশমিক ৮৫ শতাংশ। তার কাছাকাছি অবস্থানে রাজশাহী বোর্ডও। রাজশাহীতে পাসের হার ৮১ দশমিক ২৪ শতাংশ। পাসের হারে এরপর পর্যায়ক্রমে রয়েছে ঢাকা বোর্ড ৭৯ দশমিক ২১ শতাংশ, দিনাজপুরে ৭৭ দশমিক ৫৬ শতাংশ, কুমিল্লায় ৭১ দশমিক ১৫ শতাংশ, চট্টগ্রামে ৭০ দশমিক ৩২ শতাংশ, যশোরে ৬৪ দশমিক ২৯ শতাংশ।

তবে নয়টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ড এবং মাদ্রাসা ও কারিগরি মিলিয়ে ১১টি বোর্ডের হিসাবে পাসের হারে সবচেয়ে এগিয়ে মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড। এ বছর এ বোর্ডের অধীনে অনুষ্ঠিত আলিম পরীক্ষায় পাসের হার ৯৩ দশমিক ৪০ শতাংশ। এরপরই অবস্থান করছে কারিগরি বোর্ড, সেখানে পাসের হার ৮৮ দশমিক নয় শতাংশ।

চার বছর ধরে জিপিএ-৫ ও পাসের হারে এগিয়ে মেয়েরা

গত তিন বছরের মতো এবারো অসাধারণ ফলাফল করেছেন নারী শিক্ষার্থীরা। এবারো এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় জিপিএ-৫ ও পাসের হারে ছেলেদের তুলনায় এগিয়ে রয়েছেন নারী শিক্ষার্থীরা। গত তিন বছর ও চলতি বছরের ফলাফল পর্যালোচনা করে এ চিত্র দেখা গেছে। প্রকাশিত পরীক্ষার ফলাফলে দেখা যায়, এ বছর ছাত্রের চেয়ে ছাত্রীরা চার দশমিক ৩৪ শতাংশ বেশি পাস করেছে এবং ১৫ হাজার ৯৫৫ জন বেশি ছাত্রী জিপিএ-৫ পেয়েছেন।

চলতি বছর ১১টি শিক্ষা বোর্ডের দুই হাজার ৬৯৫টি কেন্দ্রে পরীক্ষার্থী ছিলেন ১৩ লাখ ৩১ হাজার ৫৮ জন। সেখানে পাস করেছে ১০ লাখ ৩৫ হাজার ৩০৯ জন শিক্ষার্থী। তাদের মধ্যে ছেলে শিক্ষার্থীর সংখ্যা পাঁচ লাখ তিন হাজার ৫৯৫ জন এবং মেয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা পাঁচ লাখ ৩১ হাজার ৭১৪ জন। এ ছাড়া ১১টি শিক্ষাবোর্ডে মোট এক লাখ ৪৫ হাজার ৯১১ শিক্ষার্থী জিপিএ-৫ পেয়েছেন। এর মধ্যে, মোট ৮০ হাজার ৯৩৩ জন মেয়ে শিক্ষার্থী ও ৬৪ হাজার ৯৭৮ জন ছেলে শিক্ষার্থী। মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী ২০২০ সাল থেকে পাসের হার ও জিপিএ-৫ পাওয়ার ক্ষেত্রে ছেলেদের তুলনায় এগিয়ে আছেন মেয়ে শিক্ষার্থীরা।

৬৫ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কেউ পাস করেননি

এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষায় দেশের ৬৫ প্রতিষ্ঠানে কেউ পাস করেননি। আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটির সভাপতি ও ঢাকা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক তপন কুমার সরকার বলেন, এবারের পরীক্ষায় ৬৫টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে কোনো শিক্ষার্থী পাস করেননি। আর শতভাগ পরীক্ষার্থী পাস করেছেন এক হাজার ৩৮৮ প্রতিষ্ঠান থেকে। ২০২৩ সালে শূন্য পাস প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ছিল ৪০টি, এবার বেড়েছে। তবে গত বছর আমরা চারটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছি। যেসব প্রতিষ্ঠান থেকে কোনো শিক্ষার্থী পাস করবে না, তাদের বিরুদ্ধে এবারো ব্যবস্থা নেবো।

কেউ পাস না করা প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে অধ্যাপক তপন কুমার সরকার বলেন, যেসব প্রতিষ্ঠান থেকে কেউ পাস করে না, এমন প্রতিষ্ঠানের পরীক্ষার্থী থাকে কম দুই-একজন। এসব প্রতিষ্ঠান নন-এমপিও।’

শতভাগ পাসের প্রতিষ্ঠান এক হাজার ৩৮৮

এ বছর শতভাগ পাস করা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বেড়েছে। প্রকাশিত ফলাফলে দেখা গেছে, এ বছর দেশের এক হাজার ৩৮৮টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সব পরীক্ষার্থী পাস করেছেন।

প্রবাসে বসে পরীক্ষা, পাস ২৬৯ জন

পরীক্ষায় এবারো প্রবাস থেকে (বিদেশ কেন্দ্র) অংশ নেন শিক্ষার্থীরা। এ বছর আটটি বিদেশ কেন্দ্রে বসে ২৮২ জন পরীক্ষা দিয়ে পাস করেছেন ২৬৯ জন। সেই হিসেবে পাসের হার ৯৫ দশমিক ৩৯ শতাংশ। তিনটি প্রতিষ্ঠান থেকে অংশ নেওয়া সব (শতভাগ) শিক্ষার্থী পাস করেছেন।

এদিকে প্রকাশিত ফলাফলের সারসংক্ষেপের তথ্যানুযায়ী-এ বছর এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষায় অংশ নিতে ফরম পূরণ করেন ১৪ লাখ ৫০ হাজার ৭৯০ জন শিক্ষার্থী। তবে পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন ১৩ লাখ ৩১ হাজার ৫৮ জন। তাদের মধ্যে ছাত্র ছয় লাখ ৬৬ হাজার ১৩ জন এবং ছাত্রী ছয় লাখ ৬৫ হাজার ৪৫ জন। সারাদেশের নয় হাজার ১৯৭টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নেন। পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয় দুই হাজার ৬৯৫টি কেন্দ্রে। পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীদের মধ্যে পাস করেছেন ১০ লাখ ৩৫ হাজার ৩০৯ জন। 

গত ৩০ জুন এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষা শুরু হয়। প্রথম প্রকাশিত রুটিন অনুযায়ী-আট দিন পরীক্ষা হওয়ার পর কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে ১৮ জুলাইয়ের সব পরীক্ষা স্থগিত করা হয়। এরপর তিন দফায় পরীক্ষা স্থগিত করে সরকার।

সূচি অনুযায়ী-মোট ৬১ বিষয়ের পরীক্ষা গ্রহণ বাকি ছিল। বিভিন্ন বিভাগের (বিজ্ঞান, মানবিক ও বাণিজ্য) বিভিন্ন বিষয় থাকায় এতগুলো পরীক্ষা স্থগিত এবং পরে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে তা বাতিল করা হয়।

পিপলনিউজ/আরইউ

শিক্ষা বিভাগের অন্যান্য খবর

Follow Us

প্রকাশক ও সম্পাদক
জাহিদুল ইসলাম
বার্তা সম্পাদক
সোহেলী চৌধুরী লিন্ডা

© 2024 সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত || peoplenewsbd.com

Develop by _ DigitalSolutions.Ltd
শিরোনাম বিক্ষোভে উত্তাল পাকিস্তান, ইসলামাবাদে ডি-চক রণক্ষেত্র শিরোনাম সংবিধান সংস্কার কমিশনে বিএনপির লিখিত ৬২ প্রস্তাব শিরোনাম চট্টগ্রামে সংঘর্ষে আইনজীবী নিহত শিরোনাম চিন্ময় দাসকে কারাগারে পাঠানো নিয়ে যা বলল ভারত শিরোনাম কুমিল্লায় ট্রেনের ধাক্কায় অটোরিকশার চালকসহ নিহত ৭ শিরোনাম চিন্ময় কৃষ্ণ দাস কারাগারে