ঐতিহাসিক ৭ মার্চ ও ১৫ আগস্ট শোক দিবস বাতিলের প্রতিবাদে বিক্ষোভ করতে এসে মারধরের শিকার হয়েছেন ক্রিয়েটিভ রাইটার্স অ্যাসোসিয়েশন নামে একটি সংগঠনের নেতা-কর্মীরা। পিটুনির শিকার হয়েছেন দশম বেতন স্কেল বাস্তবায়নের দাবিতে কর্মসূচিতে আসা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকরাও।
শনিবার (১৯ অক্টোবর) দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে এই ঘটনা ঘটে।
বেলা সাড়ে ১২টার দিকে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে ব্যানার নিয়ে বিক্ষোভ মিছিল শুরু করেন ক্রিয়েটিভ রাইটার্স অ্যাসোসিয়েশনের নেতা-কর্মীরা। এ সময় একদল যুবক এসে লাঠি দিয়ে মারধর শুরু করেন। এতে সংগঠনটির মুখপাত্র কুতুব হিলালী, সদস্য সৌমিত্র দেব, মাহবুবসহ অন্তত ছয়-সাত জন আহত হয়েছেন। কুতুব হিলালীসহ চারজনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
সংগঠনের এক কর্মী গণমাধ্যমকে বলেন, আমাদের কয়েকশ নেতা-কর্মী মিছিল করতে থাকলে আমাদের ওপর আক্রমণ হয়। এতে আমাদের অনেক নেতাকর্মী আহত হয়েছেন।
কুতুব হিলালী মোবাইল ফোনে বলেন, অনুমতি নিয়েই আমাদের পূর্বনির্ধারিত বিক্ষোভ সমাবেশটি করার জন্য বেলা ১২টার দিকে প্রেসক্লাবের সামনে যাই। বেলা সাড়ে ১২টার দিকে ব্যানার নিয়ে বিক্ষোভ সমাবেশ শুরু করার আগেই ২৫-৩০ জন লোক এসে অতর্কিত হামলা চালান। এতে আমাকে ও আমাদের ছয়-সাত জনকে তারা পিটিয়ে আহত করেন। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা নিয়ে বাসায় ফিরেছি।
কারা হামলা করেছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, হামলাকারীদের দুই-তিন জনের মুখ চিনি তবে নাম জানি না। কর্মসূচি ঘোষণার পর থেকেই তা প্রতিহতের জন্য একটি মহল বলে আসছিল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। বিএনপি-জামায়াত ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে যারা সমর্থন করে তারা এই হামলা করেছে।
একটি ভিডিও তাৎক্ষণিক সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়। সেখানে দেখা যায়, অনেকে বলছেন, ‘ওই ধর ধর, আওয়ামী লীগ ধর, সব কয়কারে ধর-পালাইতেছে।’
মারধরের শিকার একজন বলেন, এই দেশে আওয়ামী লীগের ইতিহাস কেউ কখনো মুছতে পারবে না। আমরা ছিলাম, আছি, থাকবো ইনশাআল্লাহ।
ক্রিয়েটিভ রাইটার্স অ্যাসোসিয়েশন মাঠে নামে অন্তর্বর্তী সরকারের নেওয়া একটি সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে।
সরকার সম্প্রতি আটটি জাতীয় দিবস বাতিল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এর মধ্যে ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণের স্মরণে জাতীয় দিবসটি হাই কোর্টের আদেশে পালন হওয়া শুরু হয়।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার দিনটি ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর থেকে জাতীয় শোক দিবস হিসেবে পালন করা শুরু হয়। ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় এসে এই দিবসটি বাতিল করে।
২০০৭ সালে সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে আবার দিনটি জাতীয় শোক দিবস হিসেবে পালন হওয়া শুরু হয়। গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ৮ আগস্ট ক্ষমতায় আসা অন্তর্বর্তী সরকার এই দিনের সরকারি ছুটি বাতিল করেছিল।
বাতিলের খাতায় আছে ১৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর জন্মদিনে পালিত হওয়া জাতীয় শিশু দিবস, ৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুর বড় ছেলে শেখ কামালের জন্মবার্ষিকী, ৮ আগস্ট বঙ্গবন্ধুর স্ত্রী বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের জন্মবার্ষিকী, ১৮ অক্টোবর বঙ্গবন্ধুর ছোট ছেলের জন্মদিনে শেখ রাসেল দিবস।
১৯৭২ সালের ৪ নভেম্বর বাংলাদেশের প্রথম সংবিধান প্রণয়নের দিনটি জাতীয় সংবিধান দিবস এবং ১২ ডিসেম্বর স্মার্ট বাংলাদেশ দিবস হিসেবে পালন না করার সিদ্ধান্তও নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার।
বিক্ষোভ সমাবেশে শুরু হওয়ার পর দেখা যায় প্রেস ক্লাবের উল্টোপাশ থেকে ৩০ থেকে ৪০ জন যুবক বাঁশ ও কাঠের লাঠিসোঁটা নিয়ে দৌড়ে আসেন। মিছিলকারীদের পিটিয়ে তাড়িয়ে দেন তারা।
ক্রিয়েটিভ রাইটার্স অ্যাসোসিয়েশনের কর্মী হুমায়ুন কবির সাংবাদিকদের বলেন, বিএনপি ও জামায়াতের ক্যাডাররা হামলা চালান। এতে আমাদের অনেকে আহত হয়েছেন। যার মধ্যে চারজন হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
একই সময় সেখানে শিক্ষকদের কর্মসূচি ছিল। সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যায়, একজনকে লাঠি হাতে ধাওয়া করা হচ্ছে। এরপর তাকে প্রেস ক্লাবের সীমানা প্রাচীরে গ্রিলে ঠেসে ধরে কিল ঘুসি মারা হয়।
পরে সেই ব্যক্তি নিজেকে মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখানের তেঘরিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক আহমেদ আলী পরিচয় দিয়ে সাংবাদিকদেরকে বলেন, আমাকে চাঁদাবাজ চাঁদাবাজ বলে আমাকে লাঠিপেটা করা হয়েছে। আমার মোবাইল ফোন নিয়ে গেছে। আমি এর বিচার চাই ভাই, আমি এর বিচার চাই।
আমার মোবাইল নিয়ে গেছে ভাই, আমার মোবাইল নিয়ে গেছে- বার বার এ কথা বলছিলেন তিনি। এক প্রশ্নে তিনি বলেন, আমাকে কেন মেরেছে জানি না, আমি বারবার বলেছি, আমি টিচার, আমি টিচার। তাও আমার ওপর নির্যাতন করা হয়েছে। কারা মেরেছে- এই প্রশ্নের সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য দিতে পারেননি এই শিক্ষক। তিনি বলেন, এখানে অন্য কোনো গ্রুপ ছিল।
প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকরা বর্তমানে ত্রয়োদশতম গ্রেডে বেতন পান, যা তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারীর সমমর্যাদার। এই শিক্ষকরা বহু বছর ধরেই তাদেরকে দ্বিতীয় শ্রেণির মর্যাদা দেওয়ার পাশাপাশি দশম গ্রেডে বেতনের দাবি জানাচ্ছে।
এই দাবি বাস্তবায়নে গঠন করা সংগঠন ‘শিক্ষক সমাজ’র সভাপতি মো. আনিসুর রহমান বলেন, আমাদের কর্মসূচি শেষ করে বাড়ি ফেরার সময় কিছু লোক আক্রমণ করেন। এতে আমাদের একজন শিক্ষক আহত হন। আমরা তাকে তার বাড়িতে দেখতে যাচ্ছি।
পিপলনিউজ/আরইউ
প্রকাশক ও সম্পাদক
জাহিদুল ইসলাম
বার্তা সম্পাদক
সোহেলী চৌধুরী লিন্ডা
© 2024 সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত || peoplenewsbd.com