‘বৈষম্যহীন’ এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফলের দাবিতে এবার সচিবালয়ের ভেতরে ঢুকে বিক্ষোভ করেছেন একদল শিক্ষার্থী। এই ঘটনায় প্রায় ৫৪ জনকে আটক করার কথা জানিয়েছে পুলিশ। এ সময় সচিবালয়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। নিরাপত্তাহীনতায় অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারী নির্ধারিত সময়ের আগেই সচিবালয় থেকে বের হওয়ার চেষ্টা করেন। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ছত্রভঙ্গ করতে লাঠিপেটা করেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।
বুধবার (২৩ অক্টোবর) বেলা ৩টার দিকে দেখা যায়, সচিবালয়ের ৬ নম্বর ভবনের নিচে মূল ফটকের সামনে একদল শিক্ষার্থী অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করছেন। এই ভবনের ১৯ তলায় শিক্ষা মন্ত্রণালয় অবস্থিত। এ সময় সেখানে প্রচুরসংখ্যক পুলিশের পাশাপাশি সেনাসদস্যদের দেখা যায়।
বিক্ষোভকালে একজন শিক্ষার্থী বলেন, আমরা এইচএসসি পরীক্ষার বৈষম্যহীন ফলাফল চাই। পাশাপাশি বিভিন্ন বোর্ডে আমাদের ওপর যে হামলা হয়েছে, তার বিচার চাই। দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত আমরা এখানে অবস্থান করবেন। এ সময় বিক্ষোভকারীরা আমার সোনার বাংলায় বৈষম্যের ঠাঁই নাই; উই ওয়ান্ট জাস্টিস; মুগ্ধের বাংলায় বৈষম্যের ঠাঁই নাই; তুমি কে আমি কে ছাত্র-ছাত্র; আপস না সংগ্রাম, সংগ্রাম-সংগ্রাম ইত্যাদি স্লোগান দেন।
তখন আন্দোলরত শিক্ষার্থীদের স্লোগান বন্ধ করে শান্তিপূর্ণ আলোচনার আহ্বান জানান সচিবালয়ে দায়িত্বরত বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সদস্য ও বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। কিন্তু তারা সরে না যাওয়ায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা তাদের ধাওয়া দেন। এ সময় তাদের লাঠিপেটাও করা হয়। একপর্যায়ে শিক্ষার্থীদের ধাওয়া দেয় পুলিশ। এ সময় কিছুসংখ্যক শিক্ষার্থীকে আটক করে পুলিশ।
সচিবালয়ে দায়িত্বরত পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেন, এই ঘটনায় আটকদের সংখ্যা ৫৪ জন। আটকদের বেলা সাড়ে ৪টার দিকে দুটি প্রিজনভ্যানে করে সচিবালয়ের ভেতর থেকে নিয়ে যেতে দেখা যায়।
পুলিশের রমনা বিভাগের উপকমিশনার মাসুদ আলম বলেন, সচিবালয়ে বিক্ষোভের ঘটনায় মোট ৫৪ জনকে আটক করা হয়েছে। তাদের থানায় নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
বের হওয়ার অপেক্ষায় ছিলেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা:
এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফলাফল বাতিল ও পুনরায় মূল্যায়নের দাবিতে সচিবালয়ে শিক্ষার্থীরা ঢুকে পড়ার পর আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। ফলে নিরাপত্তাহীনতায় অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারী নির্ধারিত সময়ের আগেই সচিবালয় থেকে বের হওয়ার চেষ্টা করেন। তবে গেট বন্ধ থাকায় তা সম্ভব হয়নি।
সরেজমিনে দেখা যায়, ভয়-আতঙ্কে অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারী সচিবালয় থেকে বের হওয়ার চেষ্টা করেন। তবে সব গেট বন্ধ থাকায় কেউ বের হতে পারেননি। এতে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা আরো আতঙ্কিত হয়ে পড়েন।
নিলুফার ইয়াসমিন নামে এক নারী বলেন, কখন বের হতে পারব জানি না। হঠাৎ দেখি জোরে আওয়াজ। পরে দেখি এদিক-সেদিক ছুটছে সবাই। আমিও বের হতে চাচ্ছি। কিন্তু সব গেট বন্ধ। এভাবে তো সচিবালয় চলতে পারে না। সচিবালয় কী দাবি আদায়ের কারখানা!
এর আগে ২০ অক্টোবর একই দাবিতে ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের ভেতরে ঢুকে বিক্ষোভ করেন একদল শিক্ষার্থী। সেদিন শিক্ষার্থীরা জানান, কর্মসূচি চলাকালে তাদের ওপর হামলা হয়েছে। হামলায় কয়েকজন শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন।
অন্যদিকে বোর্ডের কর্মকর্তারা বলেন, শিক্ষার্থীরা বোর্ডের চেয়ারম্যানের কক্ষে, এমনকি কক্ষের সামনেও ভাঙচুর চালান। এর আগে গত রবিবার বেলা ১১টার দিকে একই দাবিতে তারা মিছিল নিয়ে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের সামনে জড়ো হন। পরে তারা বোর্ডের প্রধান ফটকে তালা ঝুলিয়ে দেন। দুপুর পৌনে দুইটার দিকে তারা তালা ভেঙে বোর্ডের ভেতরে প্রবেশ করে চেয়ারম্যানের কক্ষে চলে যান। সেখানে ভাঙচুরও চালানোর অভিযোগ পাওয়া যায়। সন্ধ্যার দিকে একদল শিক্ষার্থী ‘অটো পাসের’ দাবি তোলেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা বোর্ডের চেয়ারম্যান অব্যাহতির ঘোষণা ও পরের দিন মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সচিব বরাবর অব্যাহতির আবেদন জমা দেন। একই সঙ্গে শিক্ষার্থীদের দাবির সঙ্গে একমত জানান।
গত ১৫ অক্টোবর এইচএসসি-সমমানের পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশিত হয়। স্থগিত হওয়া বিষয়গুলোর পরীক্ষা আন্দোলনের মুখে বাতিলের কারণে এবার এইচএসসি পরীক্ষার মূল্যায়ন হয়েছে ভিন্ন পদ্ধতিতে। বাতিল হওয়া পরীক্ষাগুলোর মূল্যায়ন হয়েছে পরীক্ষার্থীদের এসএসসি বা সমমানের পরীক্ষার নম্বরের ভিত্তিতে (বিষয় ম্যাপিং)। অর্থাৎ এসএসসিতে যে শিক্ষার্থী যত নম্বর পেয়েছিলেন, সেটি এইচএসসিতে বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে। আর এইচএসসিতে যে বিষয়গুলোর পরীক্ষা হয়েছিল, সেগুলোর উত্তরপত্রের ভিত্তিতে মূল্যায়ন হয়েছে। এ দুই মূল্যায়ন মিলে এবারের এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফল তৈরি করা হয়েছে।
পিপলনিউজ/আরইউ
প্রকাশক ও সম্পাদক
জাহিদুল ইসলাম
বার্তা সম্পাদক
সোহেলী চৌধুরী লিন্ডা
© 2024 সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত || peoplenewsbd.com