রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ন্যাশনাল টি কোম্পানির অধীন চা বাগানের শ্রমিকরা আড়াই মাস ধরে বেতন পান না। কবে তারা বেতন পাবেন তাও জানা নেই কারো।
পরিবারগুলো চরম আর্থিক সংকটের মধ্যে দিনযাপন করছে বলে জানিয়েছেন শ্রমিক নেতারা। বকেয়া বেতনের দাবিতে সিলেটের তিনটি বাগানের চা শ্রমিকরা সড়ক অবরোধ, বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করলেও কোনো সুফল মেলেনি।
বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের সিলেট ভ্যালির সভাপতি ও কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক রাজু গোয়ালা বলেন, সিলেটে এনটিসি মালিকানাধীন লাক্কাতুরা, দলদলি ও কেওয়াছড়া চা বাগানে ১০ সপ্তাহ ধরে শ্রমিকদের বেতন বন্ধ রয়েছে। শ্রমিকেরা টাকার জন্য কর্মবিরতিসহ নানা কর্মসূচি পালনের পরও কোনো কাজ হয়নি। শ্রমিকদের বেতন কবে হবে তাও বুঝা যাচ্ছে না। শ্রমিকেরা খেয়ে না খেয়ে দিন কাটাছেন। তাদের কষ্ট দেখার কেউ কি নেই।
ন্যাশনাল টি কোম্পানির আওতাধীন সিলেট বিভাগের ১২টি চা বাগানেই বেতন বকেয়া পড়েছে বলে জানান রাজু গোয়ালা।
বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়ন থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, সারাদেশে ন্যাশনাল টি কোম্পানির ফাঁড়ি বাগানসহ ১৬টি চা বাগান রয়েছে। এসব বাগানে প্রায় ১৭ হাজার শ্রমিক কাজ করেন।
ন্যাশনাল টি কোম্পানি-এনটিসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সৈয়দ মাহমুদ হাসান বলেন, সরকার থেকে টাকা না পেলে আমাদের কিছু করার নেই। সরকার থেকে সাহায্য পাওয়ার বিষয়টি একটি প্রক্রিয়া মেনে হয়। আমরা খুব আশাবাদী সরকার থেকে সাহায্য পাব।
এনটিসির ১২টি চা-বাগানসহ সব চা-শ্রমিকদের বকেয়া মজুরি ও রেশন অবিলম্বে পরিশোধ ও পিএফ (প্রভিডেন্ট ফান্ড) জমার দাবিতে শুক্রবার (১৫ নভেম্বর) বিকালে বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন সংঘ সিলেট জেলা শাখার নেতা-কর্মীরা নগরীতে বিক্ষোভ মিছিল করেন। মিছিলটি নগরীর ক্বিন ব্রিজ এলাকা থেকে শুরু হয়ে জিন্দাবাজার প্রদক্ষিণ করে।
মিছিলের আগে সিলেট জেলা ট্রেড ইউনিয়ন সংঘের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আবুল কালাম আজাদের সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য দেন চা শ্রমিক সংঘ মৌলভীবাজার জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক হরিনারায়ণ হাজরা, চা শ্রমিক লক্ষ্মী রানী বাগদি, হোটেল শ্রমিকনেতা সাদেক মিয়া, স মিল শ্রমিকনেতা রুহুল আমিন, জাতীয় ছাত্রদল সিলেট জেলা কমিটির আহ্বায়ক শুভ আজাদ শান্ত।
বক্তারা বলেন, এনটিসির হাজারো শ্রমিক মজুরি ও রেশন না পেয়ে মানবেতর জীবনযাপন করতে বাধ্য হচ্ছেন। ২৬ দিন ধরে তারা লাগাতার কর্মবিরতি পালন করছেন। কিন্ত তাতেও সরকারের টনক নড়ছে না।
তারা বলেন, ২০২২ সালে ৩১ ডিসেম্বর চা-শ্রমিকদের মজুরির মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ার পর প্রায় দুই বছর অতিবাহিত হলেও ২০২৩-২৪ সালের মজুরি নির্ধারণ করা হয়নি। এ ব্যাপারে অতীতের মতো অন্তর্বর্তী সরকারও নির্বিকার। অনেক বাগানে শ্রমিকদের মজুরি প্রায়ই আটকে রাখা হচ্ছে। এনটিসি, দেউন্দি টি কোম্পানি, সিলেট টি কোম্পানিসহ তারাপুর, ফুলতলা, ইমাম-বাওয়ানী, মোমিনছড়ার ব্যক্তিমালিকাধীন চা বাগানের শ্রমিকদের মজুরি ও রেশন ঠিকমতো পরিশোধ করা হচ্ছে না। আবার মাসের পর মাস শ্রমিকদের পিএফ চাঁদাও ফান্ড অফিসে জমা দেওয়া হচ্ছে না।
শ্রমিকরা নানা রকম বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন মন্তব্য করে বক্তারা বলেন, আইন অনুযায়ী ক্যাজুয়াল শ্রমিকদের মজুরি স্থায়ী শ্রমিকের সমান হলেও অনেক বাগানে কম মজুরি দেওয়া হচ্ছে। উৎসব বোনাস সব শ্রমিকের সমান হলেও হাজিরার ওপর নির্ভর করে বোনাস দিয়ে শ্রমিক ঠকানো হচ্ছে।
সমাবেশ থেকে শ্রমিক নেতারা সুস্থভাবে বেঁচে থাকা ও উৎপাদনে সক্রিয় থাকার প্রয়োজনে বাজারদরের সঙ্গে সংগতি রেখে ছয় সদস্যের পরিবারে ভরণপোষণের খরচ হিসাব করে ২০২৩-২০২৪ মেয়াদের জন্য নিম্নতম মজুরি নির্ধারণের দাবি জানান।
শ্রমআইন অনুযায়ী নিয়োগপত্র, পরিচয়পত্র, সার্ভিস বুক দেওয়া, বকেয়া মজুরিসহ নিয়মিত সব বাগানের শ্রমিকদের মজুরি-রেশন পরিশোধ এবং ৯০ দিন কাজ করলেই শ্রমিককে স্থায়ী করার দাবিতে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন সংগ্রাম গড়ে তোলার আহ্বান জানান নেতারা।
পিপলনিউজ/আরইউ
প্রকাশক ও সম্পাদক
জাহিদুল ইসলাম
বার্তা সম্পাদক
সোহেলী চৌধুরী লিন্ডা
© 2024 সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত || peoplenewsbd.com