ঢাকা, বাংলাদেশ ২৬ নভেম্বর, ২০২৪

বিশ্বযুদ্ধে নিহত সেনাদের দেহাবশেষ ৮১ বছর পর জাপান নেওয়া হচ্ছে

Publish : 04:25 AM, 20 November 2024.
বিশ্বযুদ্ধে নিহত সেনাদের দেহাবশেষ ৮১ বছর পর জাপান নেওয়া হচ্ছে
সংগৃহীত
কুমিল্লা প্রতিনিধি :

কুমিল্লার ময়নামতি ওয়ার সিমেট্রি (যুদ্ধসমাধি) থেকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে নিহত ২৪ জাপানি সেনার দেহাবশেষ সরিয়ে নেওয়ার কাজ শুরু হয়েছে। তাদের দেহাবশেষ নেওয়া হবে জাপানে। এরই মধ্যে দেশটির সাত সদস্যদের একটি ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ দল কার্যক্রম শুরু করেছে। ২৪ নভেম্বরের মধ্যে দেহাবশেষ সরানোর কাজ শেষ হবে।

রবিবার (১৭ নভেম্বর) বিকাল পর্যন্ত সেখানে খনন করা হয়েছে ১০টি সমাধি। পুলিশি নিরাপত্তায় খনন কাজ চলছে বলে জানিয়েছেন কুমিল্লা জেলা প্রশাসক মো. আমিরুল কায়ছার। জাপানের ফরেনসিক টিমকে সহায়তা করছে বাংলাদেশ সরকার।

কুমিল্লা-সিলেট আঞ্চলিক মহাসড়কের পশ্চিম পাশে কুমিল্লা সেনানিবাস এলাকায় অবস্থিত ময়নামতি ওয়ার সিমেট্রি ঐতিহাসিক দর্শনীয় স্থান হিসেবে পরিচিত।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে নিহত বিশ্বের ১৩টি দেশের ৭৩৭ সৈনিককে ময়নামতি ওয়ার সিমেট্রিতে সমাহিত করা হয়েছিল। এরমধ্যে ১৯৬২ সালে একজন সৈনিকের দেহাবশেষ সমাধির মাটিসহ তার স্বজনরা যুক্তরাষ্ট্রে নিয়ে যান। বর্তমানে এই সমাধিতে ২৪ জাপানি সৈনিকের মরদেহ রয়েছে।

বুধবার (১৩ নভেম্বর) থেকে সমাধিতে খনন কাজ শুরু হয়। সমাধিস্থলের মাটি খুঁড়তেই মিলছে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে নিহত জাপানি সৈনিকদের মাথার খুলিসহ শরীরের বিভিন্ন অংশের হাড়। সেগুলো অত্যন্ত যত্নসহকারে সংরক্ষণ করা হচ্ছে। কমনওয়েলথ ওয়ার গ্রেভস কমিশন এই যুদ্ধসমাধি ক্ষেত্র তৈরি ও রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব পালন করে আসছে।

সমাধিস্থলের খননকাজে জাপানের প্রতিনিধিদের সহায়তা করছেন মুক্তিযুদ্ধ গবেষক ও স্বাধীনতা পদকপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) কাজী সাজ্জাদ আলী জহির (বীর প্রতীক)। তিনি দীর্ঘদিন ধরে কবর (সমাধি) শনাক্তকরণ, দেহাবশেষ সরিয়ে নেওয়ার কাজ করছেন। বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমানের দেহাবশেষ সরিয়ে আনার কাজটিও করেছেন তিনি। জাপানের প্রতিনিধিদলের পক্ষে পুরো কর্মযজ্ঞের বর্ণনা দিয়েছেন তিনি।

কাজী সাজ্জাদ আলী জহির বলেন, জাপান সরকার ২০১৩ সালে আমাকে তাদের দূতাবাসে ডেকেছিল এই ২৪ জাপানি সৈনিকের দেহাবশেষ সরিয়ে নেওয়ার বিষয়ে। কিন্তু বিভিন্ন কারণে তখন সেটি আর সম্ভব হয়নি। গত বছর থেকে তারা বিষয়টি নিয়ে আবারো যোগাযোগ করে। এবার আনুষ্ঠানিকভাবে জাপান সরকার আমাদের সরকারের কাছে চিঠি লেখে এবং কমনওয়েলথের কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে এই কাজ শুরু করেছে।

তিনি জানান, জাপানের পক্ষ থেকে সাতজন ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ কাজ করছেন, যারা এ কাজে অত্যন্ত দক্ষ। তাদের ছয়জন জাপানি ও একজন যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক। সমাধিগুলো ৮১ বছরের পুরোনো। এরই মধ্যে খনন করে ১০ জনের দেহাবশেষ উত্তোলন করা হয়েছে।

দেহাবশেষে কী কী পাওয়া যাচ্ছে, জানতে চাইলে কাজী সাজ্জাদ আলী জহির বলেন, ৮১ বছর পর খুব বেশি কিছু পাওয়ার সুযোগ নেই। আমরা প্রতিটি সমাধির দুই ফুটের মতো খননযন্ত্র (এক্সকাভেটর) দিয়ে খুঁড়ছি। বাকিটা ম্যানুয়ালি অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে খনন করা হচ্ছে। কোনোটিতে তিন ফুট, আবার কোনোটিতে ছয় ফুট খননের পর দেহাবশেষ পাওয়া যাচ্ছে। এখন পর্যন্ত যেগুলো খনন করা হয়েছে, সেসব সমাধিতে মাথার খুলি, শরীরের বিভিন্ন অংশের হাড় পাওয়া যাচ্ছে। তবে যা-ই পাচ্ছি, সবকিছুই জাপানের বিশেষজ্ঞ দল যত্নসহকারে সংরক্ষণ করছে।

তিনি আরো বলেন, আমরা এক তরুণ সৈনিকের দেহাবশেষ তুলতে গিয়ে মাথার খুলির মধ্যে বুলেটের চিহ্ন পেয়েছি। রেকর্ড অনুযায়ী ওই সৈনিকের বয়স ২৮ বছর ছিল। আমার তখন তাকে বুকে জড়িয়ে ধরতে ইচ্ছা করেছে। এত তরুণ বয়সে পৃথিবী থেকে চলে গেছে সে। এখানে জাপানের সৈনিকদের ২৪ সমাধির মধ্যে ২০টির নাম-পরিচয় আছে। বাকি চারটির পরিচয় শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। নিশ্চয়ই তারা (জাপানের প্রতিনিধিদল) দেহাবশেষ নিয়ে গেলে ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে তাদের পরিচয় শনাক্তের চেষ্টা করবে।

কমনওয়েলথ ওয়ার গ্রেভস কমিশনের পক্ষে দায়িত্ব পালন করা কান্ট্রি অ্যাডমিনিস্ট্রেটর আবদুর রহিম সবুজ বলেন, জাপানের প্রতিনিধি দল কার্যক্রম শুরু করে। এখানে সমাহিত দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে নিহত বিশ্বের ১৩টি দেশের ৭৩৭ জন বীর সৈনিকের মধ্যে জাপানের রয়েছে ২৪ জন।

কুমিল্লা জেলা প্রশাসক আমিরুল কায়ছার বলেন, প্রধান উপদেষ্টার অনুমোদনের পর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে আমরা চিঠি পেয়েছি। জাপানি প্রতিনিধি দলও এসেছিল। খনন কাজে পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাদের নিরাপত্তা দিচ্ছে।

কুমিল্লার ময়নামতি ওয়ার সিমেট্টিতে ১৯৪১ সাল থেকে ১৯৪৫ সাল পর্যন্ত দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে নিহত ৭৩৭ জন সেনাকে সমাহিত করা হয়। ১৩টি দেশের ৭৩৭ জন যোদ্ধার মধ্যে মুসলিম ধর্মের ১৭২ জন, বৌদ্ধ ধর্মের ২৪ জন, হিন্দু ধর্মের দুই জন এবং বাকিরা খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বী।

এরমধ্যে যুক্তরাজ্যের ৩৫৭ জন, কানাডার ১২ জন, অস্ট্রেলিয়ার ১২ জন, নিউজিল্যান্ডের চার জন, দক্ষিণ আফ্রিকার একজন, অবিভক্ত ভারতের ১৭১ জন, রোডেশিয়ার তিন জন, পূর্ব আফ্রিকার ৫৬ জন, পশ্চিম আফ্রিকার ৮৬ জন, বার্মার (বর্তমান মিয়ানমার) একজন, বেলজিয়ামের একজন, জাপানের ২৪ জন এবং পোল্যান্ডের একজনের সমাধি রয়েছে।

প্রতি বছরের নভেম্বর মাসে কমনওয়েলথভুক্ত দেশের হাইকমিশনারসহ তাদের প্রতিনিধিরা এই সমাধিস্থলে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদনের মাধ্যমে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় নিহতদের স্মরণ করেন। সে ধারাবাহিকতায় এ বছরের ৯ নভেম্বর ১৩ দেশের কূটনীতিকরা সেখানে শ্রদ্ধা জানাতে আসেন।

পিপলনিউজ/আরইউ

বাংলাদেশ বিভাগের অন্যান্য খবর

Follow Us

প্রকাশক ও সম্পাদক
জাহিদুল ইসলাম
বার্তা সম্পাদক
সোহেলী চৌধুরী লিন্ডা

© 2024 সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত || peoplenewsbd.com

Develop by _ DigitalSolutions.Ltd
শিরোনাম বিক্ষোভে উত্তাল পাকিস্তান, ইসলামাবাদে ডি-চক রণক্ষেত্র শিরোনাম সংবিধান সংস্কার কমিশনে বিএনপির লিখিত ৬২ প্রস্তাব শিরোনাম চট্টগ্রামে সংঘর্ষে আইনজীবী নিহত শিরোনাম চিন্ময় দাসকে কারাগারে পাঠানো নিয়ে যা বলল ভারত শিরোনাম কুমিল্লায় ট্রেনের ধাক্কায় অটোরিকশার চালকসহ নিহত ৭ শিরোনাম চিন্ময় কৃষ্ণ দাস কারাগারে