ভারতের আলোচিত গান্ধী পরিবারের অন্যতম উত্তরাধিকার প্রিয়াঙ্কা গান্ধী ভদ্র। এই প্রথম তিনি কোনো নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছেন। আর জীবনের প্রথম নির্বাচনেই বাজিমাত করতে যাচ্ছেন তিনি। ভাই রাহুল গান্ধীর ছেড়ে দেওয়া ভারতের কেরালা রাজ্যের ওয়েনাড আসনে লোকসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনে সিপিআই ও বিজেপি প্রার্থীদের অনেক পেছনে ফেলে জয়ী হয়েছেন তিনি। গতকাল শনিবারের গণনায় দেখা গেছে, বিকাল চারটার সময় প্রিয়াঙ্কা তার দুই নিকট প্রতিদ্বন্দ্বীর চেয়ে চার লাখের বেশি ব্যবধানে এগিয়ে।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির খবরে বলা হয়েছে, কংগ্রেসনেত্রী প্রিয়াঙ্কা গান্ধী ভদ্র কেরালার ওয়েনাড তার ভাই রাহুল গান্ধীর আসনের উপনির্বাচনে এরই মধ্যে বিজয়ের মার্জিন অতিক্রম করেছেন।
এর আগে, লোকসভা নির্বাচনে রাহুল গান্ধী দুটি আসন থেকে নির্বাচনে জয়লাভ করেন। যার একটি ছিল ওয়েনাড। রাহুল গান্ধী তার জন্য রায়বেরেলি আসন ধরে রাখায় ওয়েনাড আসনটি খালি হয়। সেই আসনেই এবার বসলেন তার বোন প্রিয়াঙ্কা।
রাহুল গান্ধী চলতি বছরের এপ্রিল-মে মাসে অনুষ্ঠিত লোকসভা নির্বাচনে তিন লাখ ৬৫ হাজারের বেশি ভোটের ব্যবধানে ওয়েনাড আসনে জয়লাভ করেন। তার আগে, ২০১৯ সালে তিনি জিতেছিলেন চার লাখের বেশি ভোটের ব্যবধানে।
প্রিয়াঙ্কা গান্ধী এখন পর্যন্ত প্রায় ছয় লাখ ভোট পেয়েছেন। কমিউনিস্ট পার্টি অব ইন্ডিয়ার (সিপিআই) প্রবীণ নেতা সত্যেন মোকারি প্রায় দুই লাখ ভোট পেয়ে দ্বিতীয় স্থানে আছেন, আর বিজেপির নভ্যা হারিদাস প্রায় এক লাখ ভোট পেয়ে তৃতীয় স্থানে রয়েছেন। ওয়েনাডে আসনে মোট ১৬ জন প্রার্থী এই উপনির্বাচনে নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন।
রাহুল গান্ধী ২০১৯ সালে প্রথমবারের মতো এই আসন থেকে নির্বাচিত হয়েছিলেন। সেবার রাহুল তার মায়ের ছেড়ে দেওয়া আসন আমেথিতে হেরে যান। তবে, সর্বশেষ ২০২৪ সালের নির্বাচনে তিনি ওয়েনাড ও রায়বেরেলি-দুটি আসন থেকে নির্বাচন করে জেতেন। রায়বেরেলি আসনটিও তার মা সোনিয়া গান্ধী ছেড়ে দেওয়ার পর শূন্য হয়।
রাহুল গান্ধী এবং তার মা সাবেক কংগ্রেস সভাপতি সোনিয়া গান্ধী গত এক মাস প্রিয়াঙ্কা গান্ধীর প্রচারে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেছেন এবং পাঁচ লাখের বেশি ভোটের ব্যবধানে বিজয়ের লক্ষ্য রেখেছিলেন। জনসমর্থন লাভের জন্য রাহুল গান্ধী তার বোনকে বলেছিলেন, তিনি এমপি হলে যেন ওয়েনাডকে সর্বোত্তম পর্যটন গন্তব্যে পরিণত করা হয়। প্রিয়াঙ্কা গান্ধীর জন্য প্রচারণা চালাতে গিয়ে রাহুল গান্ধী আরো বলেছিলেন, তার দুয়ার সব সময় ওয়েনাডের মানুষের জন্য খোলা থাকবে।
লোকসভা ছাড়াও ভোট হয় ১৪ রাজ্যের ৪৭ বিধানসভা আসনের। রাজ্যগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল উত্তর প্রদেশের নয় আসনের উপনির্বাচন। ওই রাজ্যে লোকসভা ভোটে বিজেপির ফল খুব খারাপ হয়েছিল। ফলে যোগী প্রশাসনের কাছে এই উপনির্বাচন ছিল চ্যালেঞ্জের। নয় আসনের মধ্যে বিজেপির দখলে ছিল পাঁচটি, সমাজবাদী পার্টির তিনটি এবং একটি ছিল আরএলডির দখলে। বিকাল পর্যন্ত গণনায় দেখা যাচ্ছে, জেতা আসন ধরে রাখার পাশাপাশি সমাজবাদী পার্টির কাছ থেকে একটি আসন বিজেপি ছিনিয়ে নিতে চলেছে।
পাঞ্জাবে উপনির্বাচন ছিল চার আসনে। সেখানে তিনটি আসনে জয়ী হয়েছে আম আদমি পার্টি, একটিতে কংগ্রেস। কর্ণাটকে তিন আসনে কংগ্রেসের প্রতিদ্বন্দ্বী ছিল বিজেপি। কিন্তু সেখানে তিন আসনই কংগ্রেস জিতেছে। তবে আসামে কংগ্রেস তার একটি জেতা আসন হারিয়েছে। ওই রাজ্যের পাঁচ আসনেই জয়ী হয়েছে বিজেপির নেতৃত্বাধীন এনডিএ।
বিহারের চার আসনও গেছে এনডিএর দখলে। যদিও বিজেপিশাসিত রাজস্থান ও মধ্যপ্রদেশে কংগ্রেস একটি করে আসন জিতেছে। উত্তরাখন্ড, ছত্তিশগড় ও গুজরাটে একটি করে আসনে ভোট ছিল। ওই তিন বিজেপিশাসিত রাজ্যের তিন আসনই বিজেপি দখলে রেখেছে। কেরালার দুই আসনের একটি জিতেছে কংগ্রেস, অন্যটি সিপিএম।
বিজেপি প্রবল ধাক্কা খেয়েছে পশ্চিমবঙ্গে। সেখানে ছয় আসনের উপনির্বাচনের সব কটিই জিতেছে তৃণমূল কংগ্রেস। বিজেপির জেতা একটি আসন তারা ছিনিয়ে নিয়েছে। বোঝা গেল আর জি কর হাসপাতালের ঘটনাবলি তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে ভোটবাক্সে কোনো প্রভাব ফেলেনি।
পিপলনিউজ/আরইউ
প্রকাশক ও সম্পাদক
জাহিদুল ইসলাম
বার্তা সম্পাদক
সোহেলী চৌধুরী লিন্ডা
© 2024 সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত || peoplenewsbd.com