প্রতি বছর সারাবিশ্বে ১.৩ মিলিয়ন মানুষ সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যায় এবং ২০ থেকে ৫০ মিলিয়ন মানুষ আহত হয়। এদের অধিকাংশই নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশের মানুষ। বাংলাদেশে যথাযথ জরুরি চিকিৎসার পর্যাপ্ত ব্যবস্থা না থাকা ও সড়ক দুঘর্টনায় আহত মানুষদের দুই তৃতীয়াংশ হাসপাতালে নেওয়ার পথেই মারা যায়। এছাড়াও অধিকাংশ আহত ব্যক্তি প্রাথমিক চিকিৎসা পায় না।
রোববার (১৭ ডিসেম্বর) বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) শহীদ ডা. মিল্টন হলে আয়োজিত এক কর্মশালায় এসব তথ্য জানানো হয়। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে ছিলেন বিএসএমএমইউ উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ
কর্মশালায় বক্তারা বলেন, দুর্ঘটনাকবলিত মানুষের চিকিৎসাসেবা প্রদানরে জন্য প্রথম ঘণ্টাই অত্যন্ত গুরুত্ব। এসময় যদি আহতদের যথাযথ চিকিৎসা দেওয়া যায় তবে তাদের মৃত্যুহার কমে যাবে এবং দ্রুত আরোগ্য লাভ করবেন।
তারা বলেন, দেশের সড়ক, মহাসড়ক ও রাস্তার সংখ্যাসহ সামগ্রিক যোগাযোগ ব্যবস্থা যত বৃদ্ধি পাবে ততই দুর্ঘটনার আশঙ্কা বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিষয়টি মাথায় রেখে দুর্ঘটনা প্রতিরোধ, প্রশমন ও প্রতিকারের জন্য যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে। বিশেষ করে দুর্ঘটনাপ্রবণ এলাকায় জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এর পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট এলাকার হাসপাতাল, উদ্ধারকারী দলের সঙ্গে দ্রুততর সময়ে যোগাযোগ করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা প্রস্তুত রাখতে হবে। দেশের সড়ক, মহাড়কের পাশে প্রতিষ্ঠিত ট্রমা সেন্টারগুলোকে দ্রুত কার্যক্রম শুরু করতে হবে। এর বাইরেও সেসব এলাকায় স্বেচ্ছাসেবী টিম প্রস্তুত রাখতে হবে। এসব টিমে সদস্য হিসেবে বিভিন্ন পেশার বিশেষ করে শ্রমিক, রিকশাওয়ালা, দোকানদার, স্থানীয় স্কুল ও মাদরাসার শিক্ষক, শিক্ষার্থীদের অন্তর্ভুক্ত করে প্রশিক্ষণ দিতে হবে।
এসময় বিএসএমএমইউ উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, জরুরি স্বাস্থ্যসেবা পেতে হলে উন্নত দেশের মতো স্বাস্থ্যবিমা জরুরি। স্বাস্থ্যবিমা থাকলে যেকোনো জরুরি অবস্থায় রোগীদের বিনাপয়সায় চিকিৎসা করা যাবে। আমি চিকিৎসকদের মধ্যদিয়ে স্বাস্থ্যবিমা চালু করতে চাই। হাসপাতালগুলোতে সড়ক দুর্ঘটনায় আহত গরিব ও দুস্থ রোগীদের সোশ্যাল ওয়েলফেয়ার ফান্ড থাকা দরকার এবং রোগী বহনকারী অ্যাম্বুলেন্সের জন্য জরুরি ব্যবস্থা থাকা দরকার। উন্নত বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও দুর্ঘটনায় কবলিত মানুষের সেবার জন্য একটি ফান্ড রাখার উদ্যোগ নিতে হবে। যাতে করে জরুরি চিকিৎসাসেবা দেওয়ার ক্ষেত্রে হাসপাতালগুলোর আর্থিক সমস্যায় পড়তে না হয়।
তিনি বলেন, সামাজিক দায়বদ্ধতার অংশ হিসেবে সড়ক নির্মাণকারী ঠিকাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে ফান্ড গঠনে এগিয়ে আসতে হবে। সড়ক নিরাপত্তা আইন কার্যকরভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে। সাধারণ মানুষকে সচেতন করতে হবে। আইনি জটিলতার কারণে দুঘর্টনাকবলিত ব্যক্তিদের উদ্ধার কাজের জন্য সাধারণ মানুষ এগিয়ে আসতে ভয় পান।
উপাচার্য আরও বলেন, সড়ক দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ পরিবহন শ্রমিদকের চোখের রোগ, বিশেষ করে ছানিপড়া, চোখে ঝাপসা দেখা, অতিরিক্ত ও টানা পরিশ্রম করাসহ শারীরিক অসুস্থতা ও অক্ষমতা। এই পরিবহন শ্রমিকদের যথাযথ প্রশিক্ষণের পাশাপাশি নিয়মিত শরীর পরীক্ষা করতে। চোখের সমস্যার জন্য প্রতি বছর কমপক্ষে দুবার চোখ পরীক্ষা করাতে হবে। ছানিপড়া চালকদের দ্রুততর সময় অপারেশন করার উদ্যোগ নিতে হবে।
কর্মশালায় বিশেষ অতিথি হিসেবে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব ডা. মো. আখতারুজ্জামান, নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলনের চেয়ারম্যান চলচ্চিত্র অভিনেতা ইলিয়াস কাঞ্চন উপস্থিত ছিলেন।
প্রকাশক ও সম্পাদক
জাহিদুল ইসলাম
বার্তা সম্পাদক
সোহেলী চৌধুরী লিন্ডা
© 2024 সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত || peoplenewsbd.com