ঢাকা, বাংলাদেশ ২৬ নভেম্বর, ২০২৪

নোবেলজয়ী হান কাংয়ের চারটি কবিতা

Publish : 12:16 PM, 20 October 2024.
নোবেলজয়ী হান কাংয়ের চারটি কবিতা
হান কাং, ছবি সংগৃহীত
ভূমিকা ও অনুবাদ : রফিক সুলায়মান :

এ বছর সাহিত্যে নোবেল পেয়েছেন একজন নারী লেখক। তিনি দক্ষিণ কোরিয়ার সুপরিচিত লেখক হান কাং। নোবেল কমিটি তার গদ্য নিয়ে বলেছে- Her intense poetic prose that confronts historical traumas and exposes the fragility of human life.অনুবাদ করলে দাঁড়ায়- তার গদ্য ঐতিহাসিক ক্ষতগুলোকে সাহসিকতার সঙ্গে তুলে ধরে এবং মানবজীবনের ভঙ্গুরতাকে প্রকাশ করে। তার গদ্যকে বলা হচ্ছে কাব্যিক গদ্য বা poetic prose. 

নোবেল কমিটির চেয়ারম্যান অ্যান্ডার্স ওলসন এক বিবৃতিতে বলেন, দেহ ও আত্মা, জীবিত ও মৃতের মধ্যে সংযোগ সম্পর্কে তিনি অনন্যভাবে সচেতন।

তার কাব্যিক ও পরীক্ষামূলক শৈলী তাকে আধুনিক গদ্যের একজন পথপ্রদর্শক করে তুলেছে।

হান কাংয়ের জন্ম দক্ষিণ কোরিয়ার গুয়াংজুতে ১৯৭০ সালের ২৭ নভেম্বর।

তিনি লেখালেখি শুরু করেন ১৯৯৩ সালে। অর্থাৎ তার লেখক জীবনের ৩১তম বর্ষে এসে তিনি সাহিত্যের সর্বোচ্চ স্বীকৃতি লাভ করলেন। বর্তমানে শার বয়স মাত্র ৫৪ বছর। ১৯৯৩ সালে লিটারেচার অ্যান্ড সোসাইটি নামে একটি সাময়িকীতে কয়েকটি কবিতা লেখার মাধ্যমে লেখক জীবনের শুরু। তবে ১৯৯৫ সালে ছোট গল্পের সংকলন ‘লাভ অব ইয়েসু’ প্রকাশের মধ্য দিয়ে তার গদ্য পাঠকের সামনে আসে।

হান কাংয়ের বড় ধরনের আন্তর্জাতিক সাফল্য আসে ‘দ্য ভেজেটারিয়ান’ উপন্যাসের মাধ্যমে। ২০১৬ সালে তার এ উপন্যাস ম্যান বুকার পুরস্কার পায়। হান কাং-ই প্রথম কোনো দক্ষিণ কোরীয় লেখক, যিনি সাহিত্যে নোবেল পেলেন।

তার চারটি কবিতার মধ্যে দুটো বিখ্যাত চিত্রশিল্পী মার্ক রথকোকে নিয়ে। রথকো ১৯৭০ সালে আত্মহত্যা করেন। তিনি চিত্রকলার অনেক প্রচলিত ধারণা পাল্টে নতুন ধারার সূচনা করেন। বিমূর্ততাকে দান করেন নতুন ভাষা। বাংলাদেশের বিখ্যাত শিল্পী মুহাম্মদ কিবরিয়া নিজেকে রথকোর ঘরাণার মনে করতেন। হান কাং মনে করেন, রথকোর মৃত্যুর দিনে তিনি তার মায়ের গর্ভে এসেছিলেন। অভিনন্দন, নোবেলজয়ী লেখক হান কাং।

১. পিচের মতো কালো আলোর ঘর

উই ডং-এ সেদিন

করকাপাত হচ্ছিলো

এবং আমার শরীর, আমার আত্মার সঙ্গী

কেঁপে উঠেছিলো প্রতিটি ঝরে পড়া অশ্রুর সঙ্গে।

এবার নামো তোমার পথে।

তুমি কি দ্বিধাগ্রস্ত?

কী এমন স্বপ্ন দেখছো? আনমনে কীইবা ভাবছো?

দোতলা বাড়ি আলোকিত এবং ফুলের মতো প্রস্ফুটিত,

সামান্য নীচেই আমি যন্ত্রণাকে লালন করতে শিখেছি

এবং অনাঘ্রাতা আনন্দের দিকে

একটি অগ্রসরমান হাত।

এবার নামো তোমার পথে।

কী এমন স্বপ্ন দেখছো? হাঁটতে থাকো।

স্ট্রিটলাইটের আলোয় গড়া স্মৃতিগুচ্ছ অভিমুখে, আমি হাঁটলাম।

সেখানে আমি তাকালাম। লাইটশেডের ভেতরে

একটি পিচ-কালো বাড়ি। পিচ-কালো

আলোর ঘর।

আকাশ অন্ধকার আর সেই প্রগাঢ় অন্ধকারে

আবাসিক পাখি

শরীর থেকে ঢালাইয়ের আস্তরণ ছাড়িয়ে উড়ছে।

এভাবে উড়তে উড়তে আর কতবার মরতে হবে আমাকে?

কেউ তো হাতখানি ধরলো না আমার!

কোন স্বপ্নটা এতো মধুর?

কোন স্মৃতি এতোটা প্রোজ্জ্বল?

করকাপাত যেন মায়ের আঙুলের ডগার মতো

মই দিয়ে উঠে আমার এলোমেলো ভ্রু

শীতল চিবুক স্পর্শ করে, এবং আবারো

স্পর্শের আঘাত, একই স্থানে।

দ্রুততার সাথে এবার নামো তোমার পথে।

(Pitch-Black House of Light-এর অনুবাদ)

 

২. মার্ক রথকো এবং আমি-ফেব্রুয়ারির মৃত্যু

আগ বাড়িয়ে ঘোষণা করার মতো কিছুই নেই; মার্ক রথকো এবং আমার মধ্যে সম্পর্ক জাতীয় কোন ব্যাপার-স্যাপারও নেই।

তিনি ২৫ সেপ্টেম্বর ১৯০৩-এ জন্মেছিলেন এবং ২৫ ফেব্রুয়ারি ১৯৭০-এ মারা যান। অন্যদিকে আমি ২৭ নভেম্বও ১৯৭০ সালে জন্মাই এবং এখনও বেঁচে আছি। এটা ঠিক যে মাঝে মাঝে আমি মধ্যবর্তী নয় মাস নিয়ে ভাবি যা আমার জন্মকে তার মৃত্যু থেকে আলাদা করেছে।

মাত্র কয়েকদিন পর এক ভোরবেলা যখন তিনি তার স্টুডিওর কিচেনে উভয় হাতের কব্জি কেটে ফেলেছিলেন, ঠিক সে সময় আমার বাবা-মা তাদের প্রাণমনদেহকে একত্রিত করেছিলেন এবং প্রতিক্রিয়ায় উষ্ণ গর্ভের মধ্যে অবশ্যই জীবনের একটি সম্ভাবনা পুঞ্জিভূত হয়েছিল। তীব্র শীতের দাপটে নিউ ইয়র্কের সমাধিস্থলে তার দেহ অক্ষত ছিলো নিশ্চিত।

বিস্ময়কর কিছু নয়, তবে এটা নিঃসঙ্গতার মতো কিছু। আমি নিশ্চয়ই এমন এক ছিদ্রের মধ্যে আটকে ছিলাম যার হৃদয়তন্ত্রী তখনও স্পন্দন শুরু করেনি, ভাষার কিছুই জানে না, কিছুই জানে না আলো সম্পর্কে, অশ্রুজলের কিছুই জানে না-গোলাপী এক মাতৃজঠরে।

মৃত্যু এবং জীবনের মধ্যে কেবল ফেব্রুয়ারির মতো একটি ব্যবধান স্থায়ী; স্থায়ী এবং চূড়ান্তরূপে নিরাময়যোগ্য।

অর্ধগলিত, এমনকি আরও ঠাণ্ডা (নিউ ইয়র্কের) মাটিতে তার হাতটি এখনও পচেনি।

(Mark Rothko and I - Death in February- এর অনুবাদ)

 

৩. আমরা যাকে হৃদয় নামে চিনি

আমি একটি মুছে যাওয়া শব্দ পরীক্ষা করি

একটি ক্ষীণতরো অবশিষ্ট রেখাংশ, সেই জায়গা যেখানে ㄱ বা ㄴ বাঁকানো হয়, এমন একটি ফাঁক যা মুছে ফেলার আগে শূন্য ছিলো।

এমনতরো জায়গায় কোমর বাঁকিয়ে, হাঁটু গেড়ে, গোড়ালি একসাথে শক্ত করে চাপ দিয়ে কাঁধের ভেতর দিয়ে পথ তৈরি করতে চাই।

যদিও যে হৃদয় ম্রিয়মান হয়ে যায় তা অন্য কিছুকে ম্লান করে না।

একটি কম ধারালো ব্লেডে আমার ঠোঁট বেশ দীর্ঘ কর্তিত,

এখনো আরো অধিক অন্ধকার জায়গা খুঁজে খুঁজে আমার জিভ কুঁচকে যাচ্ছে।

(A Thing Called a Heart-এর অনুবাদ)

 

৪. মার্ক রথকো এবং আমি-দুই

আপনি যদি একজন ব্যক্তির আত্মাকে খণ্ডিত করেন এবং ভেতরটি প্রকাশ করেন তবে এটি এমন হবে। তারপর রক্তের গন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। চিরন্তন ছড়িয়ে থাকা রঙের ভিতর ব্রাশের পরিবর্তে স্পঞ্জ দিয়ে চাপানো, নৈশব্দের মতো লাল, দিলের রক্তের সুঘ্রাণ।

এভাবে থেমে যায়। স্মৃতি, পূর্বস্মারক, একটি দিক নির্দেশক যন্ত্র এবং পরম সত্য আমি তো আমিই।

ঝরছে, কিছু ছড়িয়ে পড়ছে, আমার কৈশিকতন্ত্রীগুলোর মধ্যে স্পষ্ট তরঙ্গের মতো, তোমার রক্ত।

অন্ধকার আর আলোর মধ্যবর্তী।

একটি নিখিল সমুদ্রের রাত যা কোনো শব্দ বা আলোকরশ্মির স্পর্শ বঞ্চিত, অযুত বর্ষ আগে বিস্ফোরিত একটি নীহারিকার পাশে দীর্ঘ সন্ধ্যা।

কিছু ঊর্ধ্বগামী, কিছু ঊর্ধ্বমুখী ছড়িয়ে ছিটিয়ে, কিছু উঠছে রক্তাক্ত রাত্রিকে মুখের মধ্যে পুরে

একটি পাখির মতো যা এইমাত্র মেঘ নির্গত বজ্রপাতের মধ্য দিয়ে উড়ে গেছে

তোমার আত্মার রক্ত আমার কৈশিক নালীতে প্রবহমান।

(Mark Rothko and I-2-এর অনুবাদ)

পিপলনিউজ/আরইউ

শিল্প-সংস্কৃতি বিভাগের অন্যান্য খবর

Follow Us

প্রকাশক ও সম্পাদক
জাহিদুল ইসলাম
বার্তা সম্পাদক
সোহেলী চৌধুরী লিন্ডা

© 2024 সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত || peoplenewsbd.com

Develop by _ DigitalSolutions.Ltd
শিরোনাম বিক্ষোভে উত্তাল পাকিস্তান, ইসলামাবাদে ডি-চক রণক্ষেত্র শিরোনাম সংবিধান সংস্কার কমিশনে বিএনপির লিখিত ৬২ প্রস্তাব শিরোনাম চট্টগ্রামে সংঘর্ষে আইনজীবী নিহত শিরোনাম চিন্ময় দাসকে কারাগারে পাঠানো নিয়ে যা বলল ভারত শিরোনাম কুমিল্লায় ট্রেনের ধাক্কায় অটোরিকশার চালকসহ নিহত ৭ শিরোনাম চিন্ময় কৃষ্ণ দাস কারাগারে