রাজধানীর আগারগাঁও থেকে শ্যামলীমুখী সৈয়দ মাহবুব মোর্শেদ সড়ক বন্ধ করে রাতেও আন্দোলন করছেন জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানে (নিটোর) চিকিৎসাধীন বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে আহতরা। নিটোর পঙ্গু হাসপাতাল নামেই সমধিক পরিচিত। তারা রাত ৯টায় এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত পঙ্গু হাসপাতালের সামনের রাস্তায় বসে স্বাস্থ্য উপদেষ্টার পদত্যাগের দাবিতে স্লোগান দিচ্ছেন।
সরেজমিন দেখা যায়, একপাশের রাস্তা বন্ধ করে দেন তারা। আহতরা হুইলচেয়ারে, কেউ ভাঙা পা নিয়েই একটি চেয়ার পেতে বসে আছেন। তাদের দাবি উপদেষ্টারা না আসা পর্যন্ত রাস্তা ছাড়বেন না এবং হাসপাতালের ভেতরে ফিরেও যাবেন না।
এর আগে দুপুর ১টা ২০ মিনিটের দিকে তারা সড়কে নেমে আসেন। ফলে শ্যামলীমুখী গাড়ির চাপ বাড়ে ও যানজটের সৃষ্টি হয়। এসময় হাসপাতালের গেটের সামনে বিপুল সংখ্যক পুলিশ অবস্থান নেয়। এ ছাড়া বিকাল ৩টায় সেনাবাহিনীও ঘটনাস্থলে আসে।
দুপুরে নিটোর পরিদর্শনে আসেন স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম ও বাংলাদেশে নিযুক্ত ব্রিটিশ হাইকমিশনার সারাহ কুক। স্বাস্থ্য উপদেষ্টা প্রায় আড়াই ঘণ্টা ধরে আহত রোগীদের খোঁজ-খবর নেন। এরপর হাসপাতাল থেকে বের হওয়ার সময় সেখানে সাংবাদিকরা কথা বলতে চাইলে আশপাশের আহত রোগীদের সরতে বলা হয়। এরপর আন্দোলন হাসপাতালে ছড়িয়ে পড়ে। চিকিৎসাধীন আহতরা উপদেষ্টার গাড়ির সামনে ও পথ আটকে দাঁড়ান।
এক পর্যায়ে আন্দোলনে আহতদের একজন গাড়ির সামনে বসে পড়েন। আরেকজন ওঠে পড়েন গাড়ির উপর। কিছু সময় তারা গাড়িতে কিল-ঘুসিও মেরে ক্ষোভ দেখাতে থাকেন। নেমে আসতে বলেন গাড়ির চালকসহ অন্যদের। পরে নিরুপায় হয়ে স্বাস্থ্য উপদেষ্টা ও ব্রিটিশ হাইকমিশনার অন্য একটি গাড়িতে করে সেখান থেকে চলে যান।
হাসপাতালটিতে আন্দোলনে আহত ৮৪ জন চিকিৎসাধীন আছেন বলে হাসপাতালের একটি সূত্র জানিয়েছে। স্বাস্থ্য উপদেষ্টা চলে যাওয়ার পর আহত ব্যক্তিরা পঙ্গু হাসপাতালের সামনের সড়কে অবস্থান নেন। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে পাশের জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল চিকিৎসাধীন এই আন্দোলনে আহত ব্যক্তিরাও সেখানে এসে বিক্ষোভে যোগ দেন।
আহত মোহাম্মদ মাসুম বলেন, স্বাস্থ্য উপদেষ্টা এসে আমাদের সঙ্গে দেখা না করা পর্যন্ত আমরা রাস্তা ছাড়ব না। তিনি অভিযোগ করে বলেন, স্বাস্থ্য উপদেষ্টা হাসপাতালের চতুর্থ তলায় গেলেও আমাদের দেখতে তিনতলায় যাননি। তিন মাস পর হাসপাতালে এলেও স্বাস্থ্য উপদেষ্টা আমাদেও উপেক্ষা করেছেন।
মাসুম বলেন, ‘আমাদের রক্তের উপর দিয়ে তিনি উপদেষ্টা হয়েছেন। জুলাই ফাউন্ডেশন থেকে এক লাখ টাকা করে দেওয়ার কথা থাকলেও এখনো বেশিরভাগই তা হাতে পাননি।’
আহত শিক্ষার্থী মোহাম্মদ হাসান বলেন, আমাদের এক একটি ওয়ার্ডে ৪৮ জন করে মানুষ আছে। কিন্তু তারা পছন্দের বিদেশি পাঁচজন সাংবাদিক নিয়ে এসেছেন এবং আমাদের দেশীয় কোনো সাংবাদিকদের ঢুকতে দেওয়া হয়নি। তারা দু-একজনের সঙ্গে কথা বলে চলে গেছেন। কিন্তু আমাদের সঙ্গে কোনো কথা বলেননি। আমরা কথা বলতে গেলেও আমাদেরকে বাধা দেওয়া হয়েছে। আমাদেরকে সামান্য ট্রিটমেন্ট দিয়ে তিন মাস বসিয়ে রাখা হয়েছে। আমার পায়ে নয়টি অপারেশন করা হয়েছে, তারপরেও এখন পর্যন্ত সুস্থ হতে পারিনি। আমাদেরকে অপারেশনে শুধু নিয়ে যায়। আমরা চাই তারা সবাই আমাদের সঙ্গে কথা বলুক। আমাদের জন্য ঘোষণা করা সেই এক লাখ টাকা দিক এবং ভালোমানের চিকিৎসাসেবা দিক।
খায়রুল নামে একজন বলেন, আমাদের চিকিৎসা হচ্ছে না। এ কারণে আমরা রাস্তায় অবস্থান নিয়েছি। আমাদের দাবি সুচিকিৎসা নিশ্চিত করতে হবে।
জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট থেকে এসে বিক্ষোভে যোগ দেওয়া আল মিরাজ নামের এক ছাত্র জানান, তার ডান চোখের রেটিনা ছিঁড়ে গেছে। চিকিৎসকেরা বলেছেন, দেশে তার চিকিৎসা নেই। তাই তাকে বিদেশে পাঠিয়ে চিকিৎসা করিয়ে আনতে সরকারের কাছে দাবি জানান। মিরাজ বলেন, স্বাস্থ্য উপদেষ্টা পঙ্গু হাসপাতালে আহত ব্যক্তিদের খোঁজ নিতে এলেও তিনি চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন চোখে আঘাত পাওয়া ব্যক্তিদের খোঁজ নিতে যাননি।
সন্ধ্যায় স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র তথ্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ শাহাদাত হোসেন সাংবাদিকদের জানান, হাসপাতালের চতুর্থ তলায় পরিদর্শন শেষে বের হওয়ার সময় সাংবাদিকদের অনুরোধে তাদের সঙ্গে কথা বলছিলেন স্বাস্থ্য উপদেষ্টা ও ব্রিটিশ হাইকমিশনার। এ সময় ভিড়ের মধ্যে গায়ে হাত দেওয়ার অভিযোগ করে একদল মানুষ অনাকাঙ্ক্ষিত ও অনভিপ্রেত পরিস্থিতির সৃষ্টি করে। স্বাস্থ্য উপদেষ্টা ও হাইকমিশনারসহ সবাই তাদের বারবার বোঝানোর চেষ্টা করলেও তারা কোনো কথা শোনেননি। এমন পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্য উপদেষ্টা এবং ব্রিটিশ হাইকমিশনার সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলা ছাড়াই চলে আসতে বাধ্য হন।
পিপলনিউজ/আরইউ
প্রকাশক ও সম্পাদক
জাহিদুল ইসলাম
বার্তা সম্পাদক
সোহেলী চৌধুরী লিন্ডা
© 2024 সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত || peoplenewsbd.com