ঢাকা, বাংলাদেশ ২৬ নভেম্বর, ২০২৪

পাঁচ কার্যদিবসের মধ্যে আন্দোলনে আহতদের চিকিৎসার রূপরেখা

Publish : 11:55 PM, 16 November 2024.
পাঁচ কার্যদিবসের মধ্যে আন্দোলনে আহতদের চিকিৎসার রূপরেখা
সংগৃহীত
নিজস্ব প্রতিবেদক :

বৈষম্যবিরোধী গণ আন্দোলনে আহতদের চিকিৎসায় আর কোনো ঘাটতি থাকবে না, অবহেলায় জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাসসহ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপগুলো পাঁচ দিনের মধ্যে প্রকাশের সিদ্ধান্ত এসেছে সুচিকিৎসার দাবিতে বিক্ষোভে নামা ব্যক্তিদের সঙ্গে আলোচনায়।

বৃহস্পতিবার (১৪ নভেম্বর) সচিবালয়ে আহতদের সঙ্গে আলোচনা শেষে সাংবাদিকদের কাছে এসব তথ্য তুলে ধরেন তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম এবং স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে আসা বিশেষ সহকারী অধ্যাপক ডা. সায়েদুর রহমান।

বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে জুলাই-আগস্ট গণ আন্দোলনে আহতদের পাশে নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ডা. সায়েদুর রহমান বলেন, আহতদের কার কোন দেশে চিকিৎসা নিলে ভালো উপশম আসবে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শক্রমে দ্রুত সেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

তিনি বলেন, আহতদের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে আজকে যে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হল তা আগামী পাঁচ কর্মদিবসের মধ্যে লিখিত আকারে প্রকাশ করা হবে। আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে স্বল্পমেয়াদী উদ্যোগগুলো দৃশ্যমান হবে। আমলাতান্ত্রিক স্থবিরতা থাকবে না। এ বিষয়ে কোনো গাফিলতি সহ্য করা হবে না। চিকিৎসা সেবা কিংবা অর্থপ্রাপ্তি যেকোনো ক্ষেত্রে গাফিলতির অভিযোগ সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হবে, জড়িত ব্যক্তিদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করা হবে।

এসময় উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম বলেন, আহতদের মধ্যে এক ধরনের ট্রমা আছে, অনাস্থা আছে। কিন্তু আমরা রাষ্ট্রের দায়িত্ব নেওয়ার পর অনেকগুলো সমস্যা এক সঙ্গে মোকাবেলা করতে হয়েছে। আজকে যেসব প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে এগুলো আগেই ঠিক করা হয়েছিল। এগুলো দ্রুত বাস্তবায়ন করা হবে। আগামী পাঁচ কর্মদিবসের মধ্যে আহতদের চিকিৎসায় একটি রূপরেখা দেওয়ার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে স্বল্পমেয়াদি পদক্ষেপগুলো বাস্তবায়ন করা হবে।

চিকিৎসা নিয়ে অবহেলা ও অন্যান্য ক্ষোভ জানাতে বুধবার (১৩ নভেম্বর) দুপুর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানের (নিটোর) সামনে শ্যামলী-আগারগাঁও সড়ক অবরোধ করে রাখেন কোটা সংস্কার ও আওয়ামী লীগ সরকার পতনের সময় আন্দোলনে আহতরা।

তারা সমন্বয়ক থেকে অন্তর্বর্তী সরকারে উপদেষ্টার দায়িত্ব নেওয়া নাহিদ ইসলাম ও আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া এবং স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম ও সমাজকল্যাণ উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদের সাক্ষাৎ না পাওয়া পর্যন্ত অবস্থান চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন।

পরে গভীর রাতে সরকারের চারজন উপদেষ্টা ও প্রতিমন্ত্রী পদমর্যাদার একজন সহকারী তাদের দাবি পূরণের আশ্বাস দিলে প্রায় সাড়ে ১৩ ঘণ্টা পর সড়ক থেকে হাসপাতালে ফিরতে রাজি হন আহতরা। বিক্ষোভ স্থলে গিয়ে বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে এ নিয়ে আলোচনা হওয়ার কথা তুলে ধরে তাদেরকে শান্ত করে হাসপাতালে ফিরিয়ে আনেন।

সেই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বৃহস্পতিবার দুপুর ২টায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে আহতদের দাবিগুলো নিয়ে আলোচনা শুরু হয়, যা সাড়ে ৫টায় শেষ হয়।

বৈঠক শেষে জাতীয় কর্তব্য পালনে কেউ অবহেলা করবে না এমন আশা প্রকাশ করে উপদেষ্টা নাহিদ বলেন, আহত ও শহীদরা কোনো সরকারের সঙ্গে সম্পর্কিত নয়, তারা রাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্কিত। তাদেরকে শ্রদ্ধা করা, সম্মান করা দেশের সব নাগরিকের দায়িত্ব। বর্তমান সরকারের জায়গা থেকে সেটি সব সময় দেখানো হচ্ছে। কিন্তু রাজনৈতিক আলাপে, মিডিয়াতে তাদের বিষয়ে কম উঠে আসছে।

তিনি বলেন, এটি সরকারের নির্দেশনার বিষয় ছিল না, মিডিয়াগুলো তাদের নিজস্ব জায়গা থেকেই এটি করার কথা ছিল। জাতীয় কর্তব্য পালনে আমরা কেউ যেন অবহেলা না করি। শহীদ পরিবার ও আহতদের নিয়ে সরকারের উপর দায় চাপিয়ে বাকিরা সবাই নির্বাচন নিয়ে আলাপ করতেছে।

এদিন বেলা ২টার কিছু সময় পর পূর্ব নির্ধারিত সূচি অনুযায়ী সচিবালয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে আসেন নিটোর বা পঙ্গু হাসপাতাল ও জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আহতরা। এর বাইরে অন্যান্য হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়া আহতরাও চলে আসায় তাতে বাঁধ সাধেন আগের রাতের বিক্ষুদ্ধরা।

সভায় ক্ষোভ ও অনুযোগ জানাতে সচিবালয়ে এসে নিজেদের মধ্যে বিভক্ত হয়ে পড়েন তারা। বিকাল ৪টায় দেখা যায়, একপক্ষ বিক্ষুব্ধ হয়ে হল রূম ত্যাগ করেছেন। সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ ও সারজিস আলম বারবার চেষ্টা করেও তাদের শান্ত করতে পারছেন না।

হাসনাত তখন বলেন, আহতদের নিয়ে বিভাজনের রাজনীতি আমরা সন্দেহের চোখে দেখি। আপনারা আলোচনা করে দাবিগুলো ঠিক করেন। আমরা আপনাদের চাওয়াগুলো পূরণ করি কিনা দেখেন। সব আহতই আমাদের চোখে আহত। এখানে ভেদাভেদ করার সুযোগ নেই।

আলোচনার কক্ষ ছেড়ে বারান্দায় দাঁড়ানো আহত এক ব্যক্তি বলেন, এখানে এমন লোক দেখতে পাচ্ছি যারা বুধবারের আন্দোলনে ছিল না। এখন তারা নিজেদের মধ্যে পাঁচজন প্রতিনিধি ঠিক করে আলোচনা করতে চাচ্ছে।

আলোচনায় উপদেষ্টা মাহফুজ আলম, শারমিন এস মুরশিদ, আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্ববায়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ এবং সমন্বয়ক ও জুলাই স্মৃতি ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক সারজিস আলম উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে আগারগাঁও এলাকায় পঙ্গু হাসপাতাল এবং পাশের জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অর্ধশতাধিক ব্যক্তি বুধবার দুপুর ১টা থেকে হাসপাতালের সামনের সড়কে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেন। এই ব্যক্তিদের কারো এক পা নেই, কেউ হুইলচেয়ারে, আবার কারো চোখে ব্যান্ডেজ রয়েছে। তারা এক পর্যায়ে স্বাস্থ্য উপদেষ্টার পদত্যাগের দাবিতে স্লোগান দেন। 

পরে গভীর রাতে ওই সড়কে গিয়ে উপদেষ্টারা ভুল স্বীকার ও দুঃখপ্রকাশ করেন। প্রথমে আহতদের উদ্দেশে উপদেষ্টা মাহফুজ আলম বলেন, ‘এখন এখানে আপনাদের কথা শোনার মতো উপযুক্ত সময় নয়। আপনারা কাল ২টার সময় সচিবালয়ে আসেন। সেখানে আলোচনার ভিত্তিতে একটি রূপরেখা প্রণয়ন করা হবে। সেই রূপরেখা ডিসেম্বরের মধ্যে বাস্তবায়ন করা হবে।’ এখন পর্যন্ত সুষ্ঠু ব্যবস্থা না হওয়ার জন্য দুঃখ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘আপনাদের চিকিৎসা ও পুনর্বাসন নিশ্চিত করা হবে।’

এ পর্যায়ে আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বলেন, ‘আমাদের ব্যর্থতা, আমাদের ভুল আছে। কিন্তু চেষ্টার দিক দিয়ে আমাদের ঘাটতি ছিল না। যে কোনো কারণেই হোক আমরা পারিনি। আমাদের ওপর বিশ্বাস রাখুন, আমরা একটি কংক্রিট (সুষ্পষ্ট) রূপরেখা দিব, লিখিত দিব।’

নিজেদের দুর্বলতার কথা স্বীকার করে উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া বলেন, ‘একটি ভঙ্গুর অবস্থার মধ্যে আমরা দায়িত্ব নিয়েছি। বহু সমস্যা দেখা দিয়েছে। আসুন আমরা আলোচনার ভিত্তিতে একটি রূপরেখা তৈরি করি। সেটি ঠিকমতো বাস্তবায়ন হচ্ছে কিনা, তা দেখার জন্য আপনারা একটা টিম করবেন।’

স্বাস্থ্য উপদেষ্টার সহকারীর দায়িত্বে আসা ড. সায়েদুর রহমান আহতদের দেশের সেবা চিকিৎসা নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতি দেন। তিনি বলেন, ‘আমরা একটি সুযোগ চাই। আমাদের একটি সুযোগ দিন। কোনো ব্যত্যয় হলে আমরা দায়িত্বে থাকব না।’

আর উপদেষ্টা ফরিদা আখতার বলেন, ‘আমরা কথা দিচ্ছি, আপনাদের সমস্যাগুলোর সমাধান করব। না পারলে তখন যা ইচ্ছা করবেন, কোনো আপত্তি থাকবে না। তবে আপনাদের সুষ্ঠু চিকিৎসা ও পুনর্বাসন নিশ্চিত করা হবে।’

এরপর আহতরা হাসপাতালে ফিরতে রাজি হন। তখন উপদেষ্টারা তাদের নিয়ে হাসপাতালে ঢোকেন। রোগীদের হাসপাতালের শয্যায় পৌঁছে দিয়ে পঙ্গু হাসপাতাল এবং জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে ভর্তি অন্য রোগীদের দেখে রাত সোয়া ৪টার পর উপদেষ্টারা বাসার উদ্দেশে যাত্রা করেন।      

সরকারবিরোধী আন্দোলনের সময় আহত হওয়া ব্যক্তিদের এই ক্ষোভ০বিক্ষোভের শুরু হয় স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নুরজাহান বেগমের পঙ্গু হাসপাতাল পরিদর্শনকে কেন্দ্র করে। আন্দোলনে আহত ব্যক্তিদের দেখতে গত বুধবার সকালে তিনি পঙ্গু হাসপাতালে যান। তার সঙ্গে ছিলেন ব্রিটিশ হাইকমিশনার সারাহ কুক। স্বাস্থ্য উপদেষ্টা সবার সঙ্গে দেখা করেননি- এ অভিযোগে হাসপাতাল থেকে বেরোনোর সময় তার পথ আটকে বিক্ষোভ করেন আহত ব্যক্তিরা। পরে তারা রাস্তায় নামেন।

ফলে আগাররগাঁও থেকে শ্যামলীমুখী সৈয়দ মাহবুব মোর্শেদ সড়ক বন্ধ হয়ে যায়। জরুরি প্রয়োজনে আসা গাড়ি ছাড়া আর কোনো গাড়ি চলাচল করতে পারেনি রাত অবধি। আহত ব্যক্তিদের সড়কে বসে বিক্ষোভের পুরোটা সময় সেখানে বিপুলসংখ্যক সেনা ও পুলিশ সদস্য অবস্থান করেন। 

পিপলনিউজ/আরইউ

জাতীয় বিভাগের অন্যান্য খবর

Follow Us

প্রকাশক ও সম্পাদক
জাহিদুল ইসলাম
বার্তা সম্পাদক
সোহেলী চৌধুরী লিন্ডা

© 2024 সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত || peoplenewsbd.com

Develop by _ DigitalSolutions.Ltd
শিরোনাম বিক্ষোভে উত্তাল পাকিস্তান, ইসলামাবাদে ডি-চক রণক্ষেত্র শিরোনাম সংবিধান সংস্কার কমিশনে বিএনপির লিখিত ৬২ প্রস্তাব শিরোনাম চট্টগ্রামে সংঘর্ষে আইনজীবী নিহত শিরোনাম চিন্ময় দাসকে কারাগারে পাঠানো নিয়ে যা বলল ভারত শিরোনাম কুমিল্লায় ট্রেনের ধাক্কায় অটোরিকশার চালকসহ নিহত ৭ শিরোনাম চিন্ময় কৃষ্ণ দাস কারাগারে