ভারতের অস্কারজয়ী সংগীত শিল্পী-সুরকার এ আর রহমান ও সায়রা বানু তাদের দীর্ঘ ২৯ বছরের দাম্পত্যজীবনের ইতি টেনেছেন। মঙ্গলবার (১৯ নভেম্বর) দিবাগত রাতে খবরটি প্রকাশ্যে আসে।
এই দম্পতির বিচ্ছেদের সিদ্ধান্তের কথা জানান সায়রার আইনজীবী বন্দনা শাহ। বিবৃতিতে বলা হয়, ‘বিয়ের বহু বছর পর স্বামী এ আর রহমানের সঙ্গে বিচ্ছেদের কঠিন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন সায়রা বানু। তাদের সম্পর্কের মধ্যে মানসিক চাপের কারণেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তারা। একে অপরের প্রতি তাদের গভীর ভালোবাসা সত্ত্বেও, এই দম্পতি খেয়াল করেছেন তাদের মধ্যে অনেক ব্যবধান, দূরত্ব তৈরি হয়েছে। যা এই মুহূর্তে কোনো পক্ষই পূরণ করতে সক্ষম নয় বলে মনে করছেন তারা।’
এ ছাড়া সামাজিক মাধ্যমে আলাদা আলাদা বিবৃতি দিয়ে বিচ্ছেদের খবরটি জানিয়েছেন রহমান ও সায়রা উভয়েই।
বুধবার (২০ নভেম্বর) থেকে ভারতসহ বিশ্বের অনেক গণমাধ্যমের শিরোনামে রয়েছেন তারা।
তাদের বিচ্ছেদ সংবাদের রেশ কাটতে না কাটতেই রহমানের ব্যান্ডের বিখ্যাত বেজিস্ট ও সহকর্মী মোহিনী দে তার স্বামী মার্কের সঙ্গে বিচ্ছেদের ঘোষণা দিয়েছেন।
এনিডিটিভির প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিচ্ছেদের কথা জানিয়ে মোহিনী ইনস্টাগ্রাম পোস্টে লেখেন, আমার প্রিয় বন্ধু, পরিবার এবং অনুরাগীরা, দুঃখের সঙ্গে জানাচ্ছি যে মার্ক এবং আমি পারস্পরিক সম্মতির ভিত্তিতে বিচ্ছেদের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমরা এখনো ভালো বন্ধু, কিন্তু আমাদের জীবনের চাহিদাগুলো ভিন্ন হয়ে যাওয়ায় এই সিদ্ধান্ত আমাদের জন্য প্রয়োজনীয় ছিল। আমরা একসঙ্গে বিভিন্ন প্রকল্পে কাজ চালিয়ে যাব, যেমন 'মামোগি' এবং 'মোহিনী দে গ্রুপ'। আমাদের কাজের সম্পর্ক আগের মতোই থাকবে।
মোহিনী ভক্তদের কাছে অনুরোধ করে বলেন, এই কঠিন সময়ে আমাদের সিদ্ধান্তকে সম্মান করুন এবং নেতিবাচক মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকুন।
এদিকে কয়েক ঘণ্টার মধ্যে এ আর রহমান ও মোহিনীর বিচ্ছেদের খবরে নেটিজেনরা দুইয়ে দুইয়ে চার মেলাচ্ছেন। এই খবর জানার পর সোশ্যাল মিডিয়ায় মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। একজন রেডিট ব্যবহারকারী রসিকতা করে লিখেছেন, রহমান এবং তার টিম হয়তো ডিভোর্স ল'ইয়ারের সঙ্গে পুরো রাত কাটিয়েছেন।
মোহিনী পোস্টের কমেন্ট সেকশন বন্ধ রাখলেও, কটাক্ষ করেছেন নেটিজেনরা। একজন লেখেন, এবার রহমান আর মোহিনী একসঙ্গে নতুন বিয়ের ঘোষণা করলেও আমি অবাক হবো না। বলা হচ্ছে মোহিনী ও এ আর রহমান পরকীয়ায় সম্পৃক্ত ছিলেন। সেই সম্পর্ককে বৈধতা দিতেই তারা নিজেদের চলমান সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে এসেছেন।
২৯ বছরের মোহিনী দে, ভারতের একজন প্রতিভাবান বেজিস্ট। এ ছাড়া তিনি জেসন রিচার্ডসন, জাকির হুসেন, উইলো স্মিথ, শিবামনি, জর্ডান রুডেস, এবং স্টিভ ভাই-এর মতো বিখ্যাত শিল্পীদের সঙ্গেও কাজ করেছেন। রহমানের সঙ্গে ‘গানবাংলা উইন্ড অব চেঞ্জ এবং ‘কোক স্টুডিও’ ছাড়াও দেশে-বিদেশে প্রায় ৪০টি শো-তে পারফর্ম করেছেন তিনি। ২০২৩ সালের আগস্ট মাসে নিজের অ্যালবাম প্রকাশ করেছেন।
এদিকে অনেক গণমাধ্যম রহমান-সায়রার অতীতের নানা কথা সামনে আনছে। হিন্দুস্তান টাইমস বলছে, গত বছর সায়রা বানুর একটি মন্তব্য ঘিরে প্রবল বিতর্ক তৈরি হয়েছিল। তবে সেদিন সায়রা পাশে পেয়েছিলেন স্বামী রহমানকে।
গত বছর অভিনেত্রী কস্তুরী শংকর ‘ভিকাতান অ্যাওয়ার্ড’ অনুষ্ঠানের একটি ভিডিও শেয়ার করেন, যেখানে দেখা যায় রাহমানের পাশে রয়েছেন স্ত্রী সায়রা। সেই ভিডিও পোস্ট করে সায়রার তামিল ভাষায় সাবলীলতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন কস্তুরী।
শুধু তা-ই নয় অভিনেত্রী সায়রার মাতৃভাষা ঠিক কী, বাড়িতে কোন ভাষায় কথা বলেন, এ নিয়েও প্রশ্ন তোলেন। সে সময়, বহু অনুরাগী রহমান ও তার স্ত্রীয়ের ব্যক্তিগত জীবনে হস্তক্ষেপ এবং অযৌক্তিক মন্তব্য করার জন্য অভিনেত্রীর সমালোচনাও করেছিলেন। এ পরিস্থিতিতে কস্তুরীর টুইটের জবাবে বেশ শান্তভাবে সামাল দেন রহমান। তিনি সেদিন তামিল ভাষায় যা লিখেছিলেন, তার অর্থ ‘ভালোবাসার প্রতি শ্রদ্ধা’।
এক সাক্ষাৎকারে রহমান জানান, সায়রা বানু কচ্ছ ও ইংরেজি ভাষায় কথা বলেন। রাহমান জানান, তিনি সায়রাকে ইংরেজি ভাষাতেই বিয়ের জন্য প্রস্তাব দিয়েছিলেন।
এদিকে রহমান-সায়রার সন্তানরা কথা বলছেন বাবা-মায়ের বিচ্ছেদ ইস্যুতে। এদিকে অস্কারজয়ী এ সুরকারের বিচ্ছেদে বেশ বিস্মিত হয়েছে তার ভক্তকুল। সামাজিক মাধ্যমেও চলছে ব্যাপক আলোচনা। এই আলোচনার মধ্যেই মুখ খুললেন রহমান-সায়রার তিন ছেলে-মেয়ে।
রহমানপুত্র আমিন সামাজিক মাধ্যমে দেওয়া স্টোরিতে একটি নোট লিখেছেন, ‘আমরা সবাইকে বিনীতভাবে অনুরোধ করছি যে এই সময়ে আমাদের গোপনীয়তাকে সম্মান করুন। আপনাদের বোঝার জন্য ধন্যবাদ।’ কন্যা খাতিজা ইনস্টাগ্রাম স্টোরিতে নিজের বক্তব্য শেয়ার করেছেন। সেখানে লেখা, ‘আমি খুব প্রশংসা করব যদি এই বিষয়টি অত্যন্ত গোপনীয়তা এবং সংবেদনশীলতার সঙ্গে দেখা হয়। আপনাদের বিবেচনার জন্য অনেক ধন্যবাদ।’
দুই ভাই-বোনের মতো মুখ খুলেছেন রহিমাও। বাবা রহমানের টুইটের স্ক্রিনশট শেয়ার করে তিনি লেখেন, ‘আমাদের আপনাদের প্রার্থনায় রাখুন।’ সর্বশেষ আম্বানিদের ছোট ছেলের বিয়ের অনুষ্ঠানে একসঙ্গে দেখা গিয়েছিল রহমান ও তার স্ত্রী সায়রা বানুকে। তখনো তাদের দেখে বোঝা সম্ভব হয়নি যে তাদের মধ্যে এতটা মানসিক দূরত্ব তৈরি হয়েছে!
১৯৯৫ সালে সায়রা বানুকে বিয়ে করেন এ আর রহমান। তাদের তিন সন্তান, খাতিজা, রহিমা ও আমিন। এর আগে এক সাক্ষাৎকারে রহমান স্বীকার করেছিলেন, স্ত্রী সায়রার সঙ্গে তার সাংস্কৃতিক মতপার্থক্য রয়েছে। যদিও বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে তারা বিষয়টি সামলে চলেন। ২৯ বছর বয়সে সায়রাকে বিয়ে করেছিলেন রহমান। আজ ২৯ বছর পর ভাঙতে যাচ্ছে তাদের সংসার।
এ আর রহমান ভারতের জনপ্রিয় সঙ্গীতশিল্পী। ১১ বছর বয়স থেকে দক্ষিণ ভারতীয় সিনেমার বিভিন্ন সুরকারের সঙ্গে বাজাতে শুরু করেন রহমান। ঘটনাচক্রে ব্যক্তি জীবনেও ধর্ম বদলান রহমান। ২৩ বছর বয়সে সপরিবার ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন তিনি। তার নাম ছিল দিলীপ কুমার। ১৯৯২ সালে তামিল ছবি ‘রোজা’ দিয়ে সুরকার হিসেবে তার যাত্রা। পরে ১৯৯৫ সালে রাম গোপাল ভার্মার ‘রঙ্গলীলা’তে সঙ্গীত পরিচালনা করে তিনি শুরু করেন বলিউড যাত্রা ।
তিনি দেশটির জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারসহ গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক পুরস্কার অস্কার, গ্র্যামি, গোল্ডেন গ্লোব অর্জন করেছেন। ভারত সরকার তাকে পদ্মভূষণ পুরস্কারে সম্মানিত করেছে।
পিপলনিউজ/আরইউ
প্রকাশক ও সম্পাদক
জাহিদুল ইসলাম
বার্তা সম্পাদক
সোহেলী চৌধুরী লিন্ডা
© 2024 সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত || peoplenewsbd.com