অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গত ১০০ দিনে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের অধীনে ৮৬ হাজার ২৭৭ জনের কর্মসংস্থান তৈরি করেছে বলে জানিয়েছেন যুব ও ক্রীড়া এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। তিনি বলেন, আগামী দুই বছরে পাঁচ লাখ কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। দেশে বর্তমানে গ্র্যাজুয়েট বেকারের সংখ্যা ২৫ থেকে ২৬ লাখের মতো বলে জানান তিনি।
রবিবার (১৭ নভেম্বর) যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের ১০০ দিনের কার্যক্রমের অগ্রগতি সংক্রান্ত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা জানান।
আসিফ মাহমুদ জানান, এই কর্মসংস্থানের মধ্যে দুই হাজার ৪৬৮ জনকে রাজস্ব খাতে এবং ৮৩ হাজার ৮০৯ জনকে প্রকল্প খাতে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। কর্মসংস্থানের এই উদ্যোগ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে বাস্তবায়িত হয়েছে, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেছে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়, মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়।
শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের অগ্রগতির বিষয়ে উপদেষ্টা জানান, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে দুই লাখ ৬৪ হাজার ৮০ জনকে প্রশিক্ষণ দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে, যার মধ্যে গত ১০০ দিনে ১৯ হাজার ৪৫২ জন প্রশিক্ষণ সম্পন্ন করেছে। বর্তমানে ৫২ হাজার ১১৫ জন প্রশিক্ষণরত।
ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা ও সামাজিক সচেতনতা বিষয়ে ৭১০ জনকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে এবং ২৩১ জনকে ট্রাফিক সহায়ক পুলিশ হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
এ ছাড়া আগামী দুই বছরে সরকারিভাবে পাঁচ লাখ কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে বলে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়।
উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া বলেন, আপনারা জানেন, তিন মাস আগে আমরা কোন অবস্থায় ছিলাম, এখন কোন অবস্থায় আছি? আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির যথেষ্ট অগ্রগতি হয়েছে। তবে যে পরিস্থিতিতে আমরা সরকারের দায়িত্ব পেয়েছি, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী একটা ভঙ্গুর অবস্থায়, পলাতক অবস্থায় ছিল। সেই অবস্থা থেকে এখন দৃশ্যমান পরিবর্তন হচ্ছে এবং সামনের দিনগুলোতে রিক্রুটমেন্ট এবং অনেক ভেহিকল আসলে খোয়া গিয়েছে, ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যেগুলো সংস্কারের কাজ চলমান আছে।
দ্রব্যমূল্যের বিষয়ে তিনি বলেন, আসলে সিন্ডিকেট একটি বড় সমস্যা এবং আপনারা জানেন, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় একজন নতুন উপদেষ্টা নিয়োগ পেয়েছেন। তিনি যেহেতু ক্লোজলি বিষয়গুলো দেখছেন এবং ওয়ান বাই ওয়ান যে বিষয়গুলো যেমন আলুর দাম বেড়ে গিয়েছে। আবার শাকসবজির দাম বাড়ছে, যদিও আমাদের সাপ্লাই বেড়েছে তারপরেও দাম বাড়ছে। সেগুলো তিনি খুব ক্লোজলি মনিটর করছেন।
উপদেষ্টা বলেন, আমাদের যে টাস্কফোর্স ছিল, সেই টাস্কফোর্স কিন্তু এখনো কাজ করে যাচ্ছে। প্রতিদিনই বিভিন্ন জায়গায় জরিমানা করছে এবং মনিটর করছে। আমরা কৃষক থেকে ভোক্তা পর্যন্ত যেন পণ্য পৌঁছে যায়, সেজন্য বিভিন্ন ফসলজাত পণ্য উদ্যোক্তাদের সাপোর্ট দিচ্ছি। প্রত্যেকটি বাজারের একটি কর্নারে কৃষি বাজার করার জন্য উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, সেটি বাস্তবায়নের পথে আছে। টিসিবির কার্যক্রম বৃদ্ধি করা হয়েছে। আশা করি সমস্যা হলে আমরা সমাধান করতে পারব।
আসিফ মাহমুদ আরো বলেন, যখন উপদেষ্টা পরিষদে আমাদের ছাত্র প্রতিনিধি হিসেবে নেওয়া হয় তখন কনফিউশন ছিল, সদ্য গ্রাজুয়েট হয়ে আমরা আসলে কতটুকু মন্ত্রণালয় কিংবা সরকারে রান করতে পারব। আমাদের জন্য একটি চ্যালেঞ্জ ছিল এবং চ্যালেঞ্জ এখনো আছে। আমাদের জন্য চ্যালেঞ্জটা শুধু নিজেদের প্রমাণ করা নয় আমাদের চ্যালেঞ্জটি এই জেনারেশনকে প্রমাণ করার জন্য, আমরা এই তরুণ প্রজন্ম শুধু ডেস্ট্রাক্টিভ ওয়েতে (ধ্বংসাত্মক উপায়) গিয়ে একটা ফ্যাসিস্ট সরকারকে পতন ঘটাতেই পারি না, আমরা কনস্ট্রাক্টিভ ওয়েতে (গঠনমূলক উপায়) দেশ পুনর্গঠনে কাজ করতে পারি এবং আমরা দেশকে পলিসি লেভেলে (নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে) কিছু ভালো উপহার দিতে পারি।
যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা বলেন, আমাদের মন্ত্রণালয় সেই কাজের মাধ্যমে আমরা প্রমাণ করতে চাই, আমাদের প্রজন্মে যারা আছে, আপনারা জানেন প্রাইভেট সেক্টরে আমাদের প্রজন্ম খুব ভালো করছে। সেখানে পরিবর্তন খুব দ্রুত হয়েছে। সেখানে যে যোগ্যতাতে নিয়ে আসা হয় কিন্তু পাবলিক সেক্টরে অনেক সময় যায় তরুণদের অংশগ্রহণ খুব কম। এটি একটা সুযোগ তরুণ প্রজন্মের নিজেদের প্রমাণ করার, বিভিন্ন সেক্টরে বিভিন্ন পর্যায়ে কাজ করার মধ্য দিয়ে। সুযোগটা যেমন আমাদের জায়গা থেকে আমরা এটি করার চেষ্টা করছি এবং তরুণ প্রজন্মের সবাই সেটা করার চেষ্টা করবে যার যার জায়গা থেকে।
রাস্তায় ট্রাফিকের দায়িত্ব পালন করা শিক্ষার্থীদের সংখ্যার হিসাব দিয়ে তিনি বলেন, ট্রাফিকে ৭০০ জন যুক্ত হওয়ার কথা। ইতোমধ্যে আমরা ২১৪ জন যুক্ত করেছি।
সংবাদ সম্মেলনে যুব ও ক্রীড়া সচিব রেজাউল মাকছুদ জাহেদী বলেন, যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের আওতায় কর্মপ্রত্যাশী যুবকদের সরকারি-বেসরকারি কর্মে নিয়োজিত এবং আত্মকর্মসংস্থানের লক্ষ্যে ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে দুই লাখ ৬৪ হাজার ৮০ জনের প্রাতিষ্ঠানিক ও অপ্রাতিষ্ঠানিক প্রশিক্ষণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। বিগত ১০০ দিনে ১৯ হাজার ৪৫২ জনকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে এবং বর্তমানে ৫২ হাজার ১১৫ জন যুব প্রশিক্ষণরত।
তিনি জানান, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ, বিপিএসসি, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়, মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় ১০০ দিনে রাজস্ব ও প্রকল্প খাতে ৮৬ হাজার ২৭৭ জনের কর্মসংস্থানের সৃষ্টি করেছে।
পিপলনিউজ/আরইউ
প্রকাশক ও সম্পাদক
জাহিদুল ইসলাম
বার্তা সম্পাদক
সোহেলী চৌধুরী লিন্ডা
© 2024 সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত || peoplenewsbd.com