ঢাকা, বাংলাদেশ ২০ অক্টোবর, ২০২৪

ঢাকায় নানা দাবিতে বিক্ষোভ, তীব্র যানজটে ভোগান্তি

Publish : 06:00 AM, 08 September 2024.
ঢাকায় নানা দাবিতে বিক্ষোভ, তীব্র যানজটে ভোগান্তি
সংগৃহীত
নিজস্ব প্রতিবেদক :

এক মাসেরও বেশি সময় পর রবিবার (১৮ আগস্ট) সারা দেশের বিশ্ববিদ্যালয়সহ সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পুরোদমে খুলেছে। একইসঙ্গে এদিন ছিল সাপ্তাহিক কর্মদিবসের প্রথম দিন। এর মাঝেই নতুন অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে নানা দাবি নিয়ে রবিবার নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ রাজধানীর মোড়ে মোড়ে অবস্থান, মানববন্ধন, অবরোধ ও বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন। এতে করে রবিবার কার্যত রাজধানীর অনেক জায়গার সড়ক স্থবির হয়ে পড়েছিল। অসহনীয় যানজটে দুর্ভোগে পড়েন নগরবাসী। দীর্ঘক্ষণ গণপরিবহন আটকে থাকার কারণে অনেককেই হেঁটে গন্তব্যে রওনা দিতে দেখা গেছে। অনেককে যেকোনো দাবিতে সড়ক বন্ধ করে বিক্ষোভ প্রদর্শনের বিপক্ষে ক্ষোভ প্রকাশ করতে দেখা গেছে। অনেকে দেরিতে কর্মস্থলে প্রবেশ করেছেন। তবে এসব কর্মসূচি ঘিরে পুলিশের উপস্থিতি দেখা যায়নি। 

রাজধানীর দোয়েল চত্বর, প্রেসক্লাব, শাহবাগ, মিরপুর রোড, সায়েন্স ল্যাব, ধানমন্ডি, আসাদগেট, খামার বাড়ি, ফার্মগেট, বিজয় সরণি ও উত্তরা এলাকায় বিভিন্ন দাবিতে বিভিন্ন সংগঠন ও শিক্ষার্থীরা অবস্থান নেন। 

সায়েন্স ল্যাব মোড়ে এইচএসসি পরীক্ষা বাতিলের দাবিতে বেলা তিনটার দিকে একদল শিক্ষার্থীকে সড়ক অবরোধ করে রাখতে দেখা যায়। উত্তরা বিএনএস সেন্টারের সামনেও এইচএসসি পরীক্ষা বাতিলের দাবিতে সড়ক অবরোধ করে রাখেন কিছু শিক্ষার্থী। একই সময়ে নিউমার্কেটের সামনে গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজের শিক্ষার্থীরা সড়ক অবরোধ করে রাখেন। তারা হলে সিট পাওয়ার দাবিতে বিক্ষোভ করেন। এ সময়ে মিরপুর সড়কে যান চলাচল প্রায় বন্ধ হয়ে যায়।

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় যমুনা অতিথি ভবনের সামনে সড়ক অবরোধ করে মানববন্ধন করেন ‘তথ্য আপা’ প্রকল্পের নারীরা। এই প্রকল্পের দ্বিতীয় পর্যায়ের জনবলসহ রাজস্ব খাতে স্থানান্তরের দাবিতে তারা সকাল ৯টা থেকে সেখানে সড়ক অবরোধ করে রাখেন। বেলা তিনটা পর্যন্ত তারা সেখানে ছিলেন। 

বেলা ১১টার দিকে শিক্ষাভবনের পাশ থেকে মাইকের আওয়াজ পাওয়া যাচ্ছিল। প্রেসক্লাব পর্যন্ত যাওয়ার আগেই দেখা গেল পুরো এলাকাজুড়ে কয়েকশ মানুষ। চাকরি স্থায়ীকরণ, সংস্কার, পুনর্বহাল, জাতীয়করণসহ নানা দাবি নিয়ে তারা আসেন এই এলাকায়।

বেলা ১১টার দিকে প্রেসক্লাবের সামনে জায়গা না পেয়ে তৎকালীন বিডিআর থেকে চাকরিচ্যুত সদস্যদের একটি দল পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ভবনের সামনে অবস্থান নেন।

বেতনবৈষম্য রোধে কয়েক দিন ধরেই গ্রাম পুলিশ রাজধানীর প্রেসক্লাবের সামনে অবস্থান নিয়েছে। বেলা ১১টার দিকে তাদের দেখা গেছে। একই সময়ে প্রেসক্লাবের সামনে মেডিক্যাল অ্যাসিস্ট্যান্ট ট্রেনিং স্কুল (ম্যাটস) শিক্ষার্থীরা দুর্নীতি ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে মানববন্ধন করেন। চাকরি স্থায়ীকরণের জন্য  দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশ পরিবার পরিকল্পনা স্বেচ্ছাসেবী (মহিলা) দাবি বাস্তবায়ন পরিষদ। মাদ্রাসা বোর্ডের বৈষম্যে রোধের দাবিতে মানববন্ধন করে বাংলাদেশ স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদ্রাসা শিক্ষক সমিতি। এ ছাড়া তৃণমূল নাগরিক আন্দোলন নামে একটি সংগঠন শেখ হাসিনা ও তার সরকারের কর্মকর্তা কর্মচারীদের  বিচারের দাবিতে সমাবেশ করে।

প্রেসক্লাব থেকে শিক্ষা ভবনের দিকে যেতে সকালে বিভিন্ন সংস্কারের দাবিতে মানববন্ধনে করেন ডিপ্লোমা সাধারণ শিক্ষার্থীরা। প্রেসক্লাব ছাড়াও হাইকোর্টের সামনের গেটে একটি জটলা দেখা যায়। সকালে  বাংলামোটরে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষের সামনেও একটি দলকে দাবি আদায়ে ব্যানার নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। কারওয়ান বাজারে পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের সামনে সকালে একদল মানুষ অবস্থান নিয়ে নানা দাবিতে স্লোগান দেন।  

বেলা ১১টার পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শাহবাগমুখী সড়কে অর্ধশত বাস নিয়ে বিভিন্ন জেলা থেকে আগত হাজার খানেক মানুষকে দেখা যায়। জাদুঘরের সামনে একটি মঞ্চও প্রস্তুত করে রাখা ছিল। তাদের একটি ব্যানারে লেখা, দুর্নীতিবিরোধী বিশেষ আইন প্রণয়নের দাবিতে সমাবেশ। আয়োজক অহিংস গণ-অভ্যুত্থান বাংলাদেশ।

বৈকুণ্ঠ দেব নামের একজন সাবেক সদস্য বলেন, বিদ্রোহের কোনো ঘটনার সঙ্গেই আমরা জড়িত ছিলাম না। বিনা কারণে আমাদের চাকরিচ্যুত করার পাশাপাশি অন্য বাহিনীতে যোগ দিতে গেলেও আমাদের বাদ দেওয়া হয়। চাকরি পুনর্বহালের দাবিতে তারা স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার কাছে স্মারকলিপি দেবেন বলে জানান তিনি। 

কলাবাগানে যানজটে আটকে থাকা আজিমপুরগামী বিকাশ পরিহনের যাত্রী মহিবুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের সাধারণ মানুষের শান্তি নেই। রাস্তায় লোকজন নামলে গাড়ি বন্ধ হয়ে যায়। অসুস্থ মানুষ হাঁটতেও পারছি না। উপায় না পেয়ে বসে আছি।’

আরেক যাত্রী বিল্লাল মিয়া বলেন, এখন অফিস পুরোদমে চলছে। সকাল ঘর থেকে বের হয়ে জ্যামে আটকে যাচ্ছি। এর মধ্যে যদি রাস্তায় কোনো আন্দোলন-বিক্ষোভ থাকে, তাহলে তো আর কথাই নেই। রাস্তায় সময় কাটে। অসুবিধা নেই, আমরা অভ্যস্ত হয়ে গেছি।

বনানী থেকে প্রতিদিন ইস্কাটনে যাতায়াত করেন সাংবাদিক সাদিয়া রহমান। তিনি বলেন, সকাল সোয়া ৯টায় অফিসের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করি। ইস্কাটনে আমার অফিসে পৌঁছাতে সাধারণত ৩০-৪০ মিনিট সময় লাগলেও আজ সেখানে পৌঁছাতে আমার প্রায় দেড় ঘণ্টা সময় লেগেছে। 

কিছু যাত্রীদের মতে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা এবং সরকারি-বেসরকারি অফিসের পূর্ণাঙ্গ কার্যক্রমের কারণে এমন যানজট দেখা দিয়েছে। 

পুলিশ সার্জেন্ট শেখ ইমরান হোসাইন বলেন, বিভিন্ন দাবিতে মানুষ সড়ক অবরোধ করায় বেলা ১১টার পরে প্রেসক্লাব ও সচিবালয় এলাকায় যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) রমনা বিভাগের সহকারী পুলিশ কমিশার (ট্রাফিক, ধানমন্ডি জোন) নবকুমার বিশ্বাস বলেন, ‘শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পুরোদমে খুলে দেওয়ায় রবিবার সকাল থেকে সড়কে যানবাহনের চাপ ছিল। এ ছাড়া শাহবাগ, সায়েন্সল্যাব ও আরো কিছু পয়েন্টে বিক্ষোভকারীরা নামার কারণে সড়কে ভোগান্তি বেড়েছে।’

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মো. মুনিবুর রহমান বলেন, শহরের বিভিন্ন স্থানে মানববন্ধন, কর্মসূচি চলে। এতে অনেক জায়গায় সড়কে যান চলাচল বন্ধ ছিল। আবার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও খুলেছে। বিভিন্ন জায়গায় যানজট শুরু হয়েছে এবং কোথাও কোথাও ধীরগতিতে গাড়ি চলে ।

উত্তরার ডিবিশনের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার কামারুজ্জামান বলেন, রবিবার সকাল থেকে ঢাকামুখী গাড়ির চাপ ছিল বেশি। ফলে এই এলাকায় যান চলাচলে কিছুটা ধীরগতি দেখা যায়। 

বাড্ডা জোনের এসি শুভ ঘোষ বলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ায় সকাল থেকে রাস্তায় গাড়ির চাপ বেশি। এর মধ্য রাস্তা সংস্কারের কাজ চলছে। যার কারণে নতুন বাজারের পর থেকে যমুনা ফিউচার পার্ক পর্যন্ত যানজট ছিল।

ঢাকা মহানগর পুলিশের-ডিএমপির ট্রাফিক রমনা বিভাগের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার সোহেল রানা বলেন, নানা দাবি আদায়ে বিভিন্ন এলাকায় বিভিন্ন লোকজন সড়কে অবস্থান নেন। সব স্কুল-কলেজ খুলে দেওয়ায় সড়কে এমনিতেই চাপ ছিল বেশি। সব মিলিয়ে সড়কে অসহনীয় যানজটের সৃষ্টি হয়েছে, কোথাও কোথাও সড়কে ধীরগতি হয়েছে।

তিনি বলেন, যানজট স্বাভাবিক করতে আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি। যেসব সড়ক বন্ধ, ডাইভারশন দিয়ে অন্য সড়কে পাঠিয়ে যান চলাচল সচল রাখার চেষ্টা করা হয়েছে।

উল্লেখ্য, কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে গত ১৭ জুলাই শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়। দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়ও বন্ধ ঘোষণা করে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। গণ-আন্দোলনের মুখে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে ভারতে চলে যান। এরপর ৭ আগস্ট থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হলেও স্কুলগুলোতে উপস্থিতি ছিল কম। গতকাল রবিবার বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পুরোদমে খুলেছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো খুলে দিয়ে শিক্ষা কার্যক্রম শুরুর নির্দেশ দিয়েছে মন্ত্রণালয়। প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোও পুরোদমে চালুর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

পিপলনিউজ/আরইউ

রাজধানী বিভাগের অন্যান্য খবর

Follow Us

প্রকাশক ও সম্পাদক
জাহিদুল ইসলাম
বার্তা সম্পাদক
সোহেলী চৌধুরী লিন্ডা

© 2024 সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত || peoplenewsbd.com

Develop by _ DigitalSolutions.Ltd
শিরোনাম পদত্যাগের ঘোষণা দিলেন ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান শিরোনাম খামেনির ওপর হামলা চালাতে পারে ইসরায়েল শিরোনাম পাকিস্তানের সঙ্গে ড্র করে সাফে টিকে রইল বাংলাদেশ শিরোনাম হাজারীবাগে ভবন নির্মাণে ৫ লাখ টাকা চাঁদা দাবি, গ্রেপ্তার ১ শিরোনাম ধর্ষণ মামলার যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামী বাবু গ্রেপ্তার শিরোনাম ট্রাফিক আইন লঙ্ঘনে ডিএমপির ১২৬৩ মামলা, জরিমানা প্রায় ৫১ লাখ টাকা